মোঃ কামাল হোসেন খাঁন,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত বৃক্ষ সজনে গাছ। মেহেরপুরসহ সারা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা বসত বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার আশেপাশে অবহেলা, অনাদরে সজনে গাছ বেড়ে ওঠে। গাছের মালিককে পরিচর্যা করতে হয় না বললেই চলে। বছরে একবার সবজির (ডাটা) যোগান দিলেও সারা বছর শাক হিসাবে এর পাতা পাওয়া যায়। সবজি হিসেবে সজনের কচি ডাটা যেমন উপাদেয় এবং পুষ্টিকর তেমনি এর পাতাও ঔষধি গুণে ভরপুর। তাই গবেষকরা সজনে পাতাকে নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং সজনে গাছকে মিরাকেল ট্রি বলে অভিহিত করেন। সজনে পাতাকে ইংরেজিতে মুরিঙ্গা লিফ এবং সজনে ডাটাকে ড্রাম স্টিক বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সজনে ডাটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিংগাপুরের মার্কেটে প্রতি ২/৪ পিস সজনে ডাটা ২/৩ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। যার মূল্য বাংলাদেশী টাকা প্রায় ২৪০ টাকা। বর্তমানে মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার কিছু বাজারে সজনে ডাটা বিক্রি হচ্ছে ২’শ ৫০/৩’শ টাকায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, সজনে গাছ কি পরিমাণ রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আপাততঃ জানা নেই। তবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে এবং অকাল বার্ধক্য সমস্যা দূরীকরণেও সজনের ভূমিকা অপরিসীম বলে জানান। তিনি জানান, সজনে গাছ খরা সহিঞ্চু গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের উদ্ভিদ। আমাদের দেশে সাধারণত এপ্রিল মাসে ডালের মাধ্যমে সজনে গাছের বংশবিস্তার করানো হয়। ফাল্গুন মাসে সজনে গাছ ভরে ওঠে শ্বেত শুভ্র ফুলে। যা মাঘের মাঝামাঝি সময়েও মেহেরপুরে দেখা যাচ্ছে।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি), সকাল থেকে বিকেল অবধি জেলার শ্যামপুর, আলমপুর, ঝাঁঝা, গোভীপুর, বাজিতপুর, বুড়িপোতা, উত্তর শালিকা, হরিরামপুর, সোনাপুর, পিরোজপুর, আমঝুপি, হিজুলী, যুগিন্দা, চিৎলা, বাঁশবাড়ীয়া,বারাদী, হাসানাবাদ,পাটাপকা,পাটকেলপোতা,বর্শিবাড়িয়া, গাঁড়াডোব, সাহারবাটী, ভাটপাড়া, নওপাড়া, লক্ষ্ণীনারায়ণপুর, মাইলমারী, হিন্দা, হিজলবাড়ীয়া, পশ্চিম মালশাদহসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অসংখ্য সজনে গাছ চোখে মেলে। যার রূপ সত্যিই মোহিত করে। সজনে পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায় এগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি জীবন ধারণের পুষ্টির যোগানও দেয়। এর শিকড়ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। নিম পাতার চেয়েও বেশি ঔষধি গুনাগুন থাকে সজনে পাতায়।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, সজনে চাষ সম্প্রসারণে ইতিপূর্বে রাস্তার পাশে সজনে গাছ লাগাতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
গাংনী উপজেলা শহরের রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম জানান, সজনেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, জিংক, আয়রন এবং পটাশিয়াম রয়েছে। যা অন্ধত্ব ও রক্ত স্বল্পতাসহ ভিটামিনজনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। শরীরের সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। হজম ক্ষমতা বাড়াতে, শরীরের ওজন কমাতে, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সজনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সজনেতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। এটি যকৃত ও কিডনি ভালো রাখে। সৌন্দর্য বাড়াতেও ভূমিকা রাখে সজনে