স্বপন কুমার রায়,খুলনা ব্যুরো প্রধানঃ কেটে গেল ১১ বছর। তবু জানা গেল না মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরোয়ার ওরফে সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনি ওরফে মেহেরুন রুনিকে কারা কী কারণে খুন করেছে। তদন্ত নিয়ে কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না তদন্ত সংস্থা র্যাব। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন দ্রুত দিতে র্যাবকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে এতদিনেও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশ সাগর ও রুনির পরিবার। তারা মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় শেরেবাংলানগর থানায় করা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে র্যাব।
এখন পর্যন্ত ৯৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছানো হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। সবশেষ ৪ঠা জানুয়ারি এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ৫ মার্চ ধার্য করেন। দ্রুত সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১০ই ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে স্মারকলিপি দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতারা।
স্মারকলিপি গ্রহণের পর সচিবালয়ে নিজ কক্ষে তিনি সাংবাদিক নেতাদের বলেন, ডিআরইউর স্মারকলিপি আমি র্যাবের ডিজিকে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি একটা কিছু যেন তারা জানান, সেই নির্দেশনা তাদের দেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি রহস্য উদ্ঘাটনের। তিনি বলেন, বিচার তো আমরা করতে পারব না। আমরা তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব। চেষ্টা করছি। অনেক বছর তো হয়ে গেছে। আমরাও চাই, এর রহস্য উন্মোচিত হোক। উদীয়মান দুই সাংবাদিক, যাদের অনেক প্রতিভা ছিল, তারা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। তারা আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। কেন এ হত্যাকান্ড হয়েছে, তা উদঘাটন করতে আমরাও চাই।
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পরদিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আসামিদের তো আদালতে হাজিরা দিতেই হচ্ছে। তারা অপরাধী হলে সাজা পেত, অপরাধী না হলে ছাড়া পেত। আমরা আশা করি, আলোচিত এ মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত এসপি খন্দকার মো. শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এটি আলোচিত মামলা। তাই সময় লাগছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল কদম ফোয়ারা প্রদক্ষিণ করে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার হচ্ছে না। সারা দেশে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। কোনো বিচার আপনারা করছেন না। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করছেন? সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে বারবার। আর যেন পেছানো না হয়। সাগর-রুনি খুনের বিচার দাবি করছি। গত এক বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চারবার দেখা করেছি। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিষয়গুলো সুরাহা করতে বলেছি। তিনি বারবার কথা দিয়েছেন।
ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতায় এসেছি কিন্তু জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ১১ বছর আগে সাগর-রুনি হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ১১ বছর একই সরকার ক্ষমতায়। অথচ সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয় না! কোথায় যাব আমরা? সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র দেখছে না। যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। এদিকে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ডিআরইউ। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে এ কর্মসূচিতে সবাইকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন করবে ডিইউজে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।