রাকিব হোসেন,ঢাকাঃ লঞ্চ ব্যবসার চরম মন্দা উল্লেখ করে চলতি বছরের ৩০ মার্চ নৌযান (লঞ্চ) শ্রমিকদের জন্য ৬০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করে প্রকাশিত নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেট রহিত বা বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। শনিবার সকালে রাজধানীর সদরঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবী জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার সহ সভাপতি আলহাজ মোঃ বদিউজ্জামান বাদল বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা একদিনের জন্যও বন্ধ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে আজ এ ব্যবসার যবনিকার পদধ্বনি শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে নৌযান শ্রমিকদের জন্য ৫ বছর মেয়াদী মজুরি কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ৫ বছর না যেতেই শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি ও খাদ্য ভাতার নামে আন্দোলন ও লঞ্চ ধর্মঘট করে। ২০২০ সালে জনপ্রতি মাসিক ১,০০০ টাকা খাদ্যভাতা আদায় করে নেয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারীর কারণে মজুরি কাঠামো করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শ্রমিকরা পুনরায় মহার্ঘ্য ভাতার জন্য আন্দোলন করে ৫ বছরের ব্যবধানে শ্রমিকরা গেজেটের বাইরে অতিরিক্ত ২,২০০ টাকা করে আদায় করে নেয়। এছাড়াও শ্রমিকরা বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ধোলাই ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পেয়ে শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নির্ধারনের লক্ষ্যে শ্রম অধিদপ্তরের আহ্বানে মালিক পক্ষ থেকে লঞ্চ ব্যবসার মন্দা অবস্থার কথা বিবেচনা করে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি মজুরি কাঠামোর প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। এর আগে কয়েকবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে মজুরি কাঠামোর প্রস্তাবনা
দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় কর্তৃক মজুরি স্কেল পুনঃনির্ধারণ প্রস্তাবনা কমিটির চতুর্থ সভার সিদ্ধান্তকে পাস কাটিয়ে ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বরাবর আমরা আরো একটি আবেদন করি। আবেদনে ৬০শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে আলোচনা সাপেক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তর আমাদের প্রস্তাবনা ও সমস্যাগুলো আমলে না নিয়ে এবং বেতন-ভাতা প্রদানে মালিকদের সক্ষমতা বাচাই না করে ৬০শতাংশ মজুরি বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করেন, যা বর্তমান লঞ্চ ব্যবসার বাস্তবতার সঙ্গে মোটেও নামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই সদ্য ঘোষিত মজুরি কাঠামো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তারা। তাছাড়া সাম্প্রতি বরিশালসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলার যাত্রী সাধারন স্বল্পসময়ে যাতায়াতের জন্য সড়কপথের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে লঞ্চের ৬০ শতাংশ যাত্রী হ্রাস পেয়েছে। যাত্রী স্বল্পতার কারনে ইতিমধ্যে কয়েকটি রুট বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইতিমধ্যে কয়েকটি লঞ্চ স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার জিপিও মোড় হতে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত যানজটসহ নানা ভোগান্তির কারণে সাধারণ যাত্রীরা লঞ্চের পরিবর্তে সড়কপথে বেশি যাতায়াত করছেন। অন্যদিকে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স, বিআইডব্লিউটিএ ও ডিজি শিপিংয়ের বিভিন্ন ধরনের ফিস বৃদ্ধির কারণে নৌযান পরিচালন ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে। লঞ্চে ব্যবহারের জন্য আমদানীকৃত ইঞ্জিন ও সকল প্রকার যন্ত্রাংশের মূল্যও বহুগুণ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম সীমাহীন বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় লঞ্চে যাতায়াত কমে গেছে। লঞ্চের কেবিনে ব্যবহৃত এসির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার যাত্রী সাধারণ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এসি কেবিনে যেতে আগ্রহী নন। যেহেতু মালিকগণ জ্বালানি তেল ব্যবহার করে নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এসি চালনা করে থাকেন, সেহেতু এসির কেবিনের ওপর মূসক ধার্য্য করা অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেবাখাতটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কাছে চার দফা দাবি পেশ করেন তারা। দাবিগুলো হলো- শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক বিগত ৩০ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে প্রকাশিত গেজেটে নৌযান শ্রমিকদের জন্য ৬০% মজুরি বৃদ্ধির কার্যকারীতা স্থগিত করে এই মজুরি প্রদানের সক্ষমতা মালিকদের আছে কিনা- তা যাচাই বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন ও লঞ্চের শ্রেনী বিন্যাস করে মজুরী কাঠামো নির্ধারন করন। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে জিপিও মোড় হতে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ হকার ও যানজটমুক্ত রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ । দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের যাত্রীদের ঢাকা নদীবন্দরে যাতায়াতের সুবিধার্থে গুলিস্তান হতে সদরঘাট পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেতুর একটি শাখা সদরঘাট হতে বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু ও আরেকটি শাখা
পোস্তগোলা শশ্মানঘাট পর্যন্ত বর্ধিত করা ও লঞ্চের কেবিনে ব্যবহৃত এসির ওপর ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার করার দাবি জানান তারা।