মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঠাকুরগাঁও জেলায় এক সময় ব্যাপক গম চাষ হত। তবে বর্তমানে অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমে ফলন ও লাভবান কম হচ্ছেন কৃষকরা। তাই গম চাষে দিন দিন উৎসাহ হারাচ্ছেন তারা। ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০২০ সাল থেকে গমের আবাদ কমে যাচ্ছে। গমের চেয়ে ভুট্টার ফলন প্রায় তিন গুণ বেশি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা গমের পরিবর্তে লাভজনক ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি উর্বর হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের আবাদ ভাল হয়। চলতি বছরে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার যে জমিগুলোতে আগে গম চাষ হয়েছিল, এবার সে সব জমির অধিকাংশ জায়গাতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের তথ্য মতে, ২০২০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর গম চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে আর ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, গত বছর গমের দাম কম থাকায় এবছর গমের তুলনায় বেশি করে চাষ করেছেন ভুট্টা। ৩৩ শতকের এ বিঘা জমিতে গম চাষ করে পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা আর ভুট্টায় পাওয়া যায়, প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ৫০ শতকের জমিতে ভুট্টা পান প্রায় ১ লাখ টাকা। গমে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তাই আগামীতে গমের তুলনায় আরও বেশি করে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানান তারা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে কৃষক হোসেন রাজু বলেন, ‘যদিও আগে গম চাষ করতাম কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে গমে বেশি ভাল না হওয়ায় এখন আলু আর ভুট্টা চাষ করছি।’বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ঝলঝলি গ্রামের কৃষক জসিম
সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘গতবছর গমের দাম কম পাওয়ায় এবার ৩৩ শতক জমিতে গম চাষ করেছি। গতবার মাত্র দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টায় ভালো টাকা পাওয়ায় এবার চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।’ একই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর কাচকালি গ্রামের কৃষক রহিম বলেন, ‘৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই গম বিক্রি করে পাওয়া যায় ২০ হাজার টাকা। আর ভুট্টায় খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা আর তা বিক্রি করে পাওয়া যায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই আমাদের এই দিকের কৃষকরা গমের চাষাবাদ কমিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন বেশি।’ লাহিড়ী হাট,জাউনিয়া গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম চাষ করে টাকা পাই ২০ হাজার আর ভুট্টা বিক্রি করে পাই প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তাই আগামীতে আমি আর গম চাষ করব না। এজন্য এবার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে গম করেছি। কিন্তু ভুট্টা করেছি দুই বিঘা জমিতে।’হরিপুর উপজেলার জাদুরাণী এলাকার কৃষক জব্বার বলেন, ‘ভুট্টার তুলনায় গমের দাম ও ফলন কম। ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে কম হলেও ভুট্টার ফলন হয় ৯০ মণ। গম চাষ করতে পরিশ্রমও বেশি লাগে আর ফলনও কম হয়। তাই আমরা কৃষকরা দিন দিন গমের আবাদ কমিয়ে দিচ্ছি।’ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ -পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদের এরিয়া সর্বোচ্চ হলেও চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কমে গেছে। গমের বাজার দর ভালো হলেও এক হেক্টর জমিতে চার টন গম পাওয়া গেলেও একই পরিমাণ জমিতে ভুট্টার ফলন হচ্ছে ১২ টন। তাই কৃষকরা গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে আগামিতে গমের ভালো জাত ও ফলন বৃদ্ধি করতে পারলে ঠাকুরগাঁও জেলায় গমে আবাদ বাড়বে।’