আলমগীর ইসলামাবাদী,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ তিনি উম্মাহর এক অনুপম আদর্শ রাহবার। উম্মাহ দরদী প্রাণপুরুষ , সাদাসিধে জীবনযাপনে একেবারে সাহাবায়ে কেরামদের নমুনা।
সালাফের গুণে গুনান্বিত একজন নির্ভরযোগ্য রুহানি উস্তায ও মুরব্বি পেয়ে আমরা সৌভাগ্যবান হলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
হযরত একই সাথে কুরাইশী নসবের শরাফত ও রুহানী ইলমের দৌলত প্রাপ্ত। কেননা, তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর, হযরত থানভী র. এর সুহবতপ্রাপ্ত : শায়খূল ইসলাম আল্লামা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ এর নাতী এবং শায়খূল ইসলামের ইলম, রুহানিয়াত নুরানিয়াত ও নসবের যথাযোগ্য উত্তরসূরী।
হযরতুল উস্তাযের পিতা আল্লামা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ এর সাহেবযাদা হযরতুল আল্লাম ওমর কুরাইশী রহ. ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক উস্তাদ।
প্রয়াত মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আলমপুরী এবং শায়খুল হাদীস মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব (বারাকাল্লাহু ফী হায়াতিহিমা) সহ অনেকেই হলেন তাঁর শাগরিদ ।
হযরত কাফিয়া থেকে শুরু করে তাখাসসুস ফীত তাফসির সহ দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করেন। সাথে সাথে হিন্দুস্তানের ছাহেবে নিসবত বুযুর্গদের খেদমতে হাজির হন। তাদের নিবিড় সোহবতে সিক্ত হন। বিশেষত ফক্বীহুল উম্মত আল্লামা মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. ও আরেফ বিল্লাহ আল্লামা ছিদ্দীক আহমাদ বান্ধয়ী রহ. এবং আরেফ বিল্লাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ. ছিলেন তাঁর সোহবতের কেন্দ্রস্থল।
পড়াশোনা ও সোহবতের মারহালা সমাপ্ত করে উস্তাদদের নির্দেশক্রমে হিন্দুস্তানেই খেদমতে মনোনিবেশ করেন।
সর্বশেষে তিনি ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান; জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাবেক সভাপতি :
মুফতীয়ে আযম হিন্দ আল্লামা মুফতী কেফায়াতুল্লাহ দেহলভী রহ. প্রতিষ্ঠিত ও স্মৃতি বিজড়িত
#জামিয়া আমীনিয়া দিল্লীর সদরুল মুদাররিসিন এবং প্রধান মুফতী ছিলেন এবং বুখারী শরীফের দরস দেন।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন উস্তাদগনের তালিকায় রয়েছে খাতামুল মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী এবং শায়খূত তাফসির আল্লামা ইদরীস কান্দলবী ও প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কালজয়ী বহুগ্রন্থ প্রণেতা
হযরতুল আল্লাম মুহাম্মাদ মিয়া রহিমাহুমাল্লাহ সহ জগতখ্যাত আলেমরা। তাদের কেউ কেউ শুরুর দিকে জামিয়া আমিনীয়াতে তাদরীসের খেদমত আনজাম দেন। পরবর্তীতে ইলমে দ্বীনের চাঁদ ও সূর্য হিসেবে উদিত হয়ে দারুল উলুম দেওবন্দেও খেদমত আনজাম দেন।
সেখানকার তৎকালীন শায়খুল হাদীস ও প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুর রহমান সাহেব রহ. ইন্তেকালের পূর্বে বার্ধক্য ও অসুস্থতার দরুণ বুখারী শরীফ ছানীর দরস ও প্রধান মুফতির কার্যক্রম তাঁর যিম্মায় দিয়ে দেন। দেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানকার সদরুল মুদাররিসিন এবং শায়খুল হাদীস ও প্রধান মুফতীর যিম্মাদারী আঞ্জাম দেন।
এ সময়ে হযরতুল উস্তায হিন্দুস্তানের অনেক মাদ্রাসার সারপুরস্ত বা পৃষ্ঠপোষক এবং উপদেষ্টা হিসেবে খেদমত আনজাম দিন।
হিন্দুস্তানের এই তাদরীসি যিন্দেগীতে ইন্ডিয়া ফিকহ একাডেমীর ‘ফিকহী সেমিনারে একজন বাহিস ও নাক্বেদ ( গবেষক ও আলোচক ) এর হাইসিয়াতে হযরত কে আমন্ত্রণ জানানো হতো।
হযরত ও সবিস্তারে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করতেন।
অনেক সময় এমন হত যে, পুরো মজলিসের মত বা ‘রুজহান’ এক দিকে আর হযরতুল উস্তাযের রুজহান ও ফতওয়া দালায়েলের আলোকে অন্যদের মতের বিপরীতে হয়ে যেতো। কিন্তু পরিশেষে পর্যালোচনা করে হযরতের রায়ের উপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।
এ সব কিছু ছাড়িয়ে হযরতের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁর নিরহংকার বিনম্র সরল অথচ সুস্থির অকৃত্রিম গম্ভীর ব্যক্তিত্যই অন্যের জন্য আত্মশুদ্ধির বড় সবক। নিভৃতি নির্জনতাই তাঁর যেনো ফিতরত।
দীর্ঘকাল হিন্দুস্তানে থাকা ও তাঁর নির্জনপ্রিয় ব্যক্তিত্যের কারণেই এতকাল আমরা বাংলাদেশীরা তাকে জানতে পারিনি। তাঁর ইলমী ও রুহানি ফুয়ুয থেকে বঞ্চিত থেকেছি।
আজ থেকে প্রায় একযুগ পূর্বে হযরতকে দারুল উলুম হাটহাজারীর জন্য আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহঃ কর্তৃক ঢাকা হয়েছিলো। তিনিও ঢাকে সাড়া দিয়ে দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দারুল উলুম হাটহাজারীতে তাঁর প্রবেশ রুদ্ধ করা হয়।যেহেতু তিনিও নিভৃতচারী সরল মানুষ। কোনো ষড়যন্ত্রে নিজেকে জড়াতে চাননি। তাই অবস্থা বুঝে নিজ থেকে কেটে পড়েছিলেন। আফসোস, সেই রেহলায় ইলম ও রুহানিয়াতের এই যাত্রা শুরু আর হলো না।
তবে সাথে সাথে বাংলাদেশ ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রথম শায়খুল হাদীস ও শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ এর ছাত্র হযরত আল্লামা সাঈদ আহমদ সন্দীপী রহ এর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম চারিয়া এই রত্নকে মুহাদ্দিস হিসেবে নিজেদের করে নেয়।
তিনিও অত্যন্ত সুনামের সাথে চারিয়া মাদরাসায় দরস তদরীস চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত চারিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস হিসেবে নিযুক্ত থাকেন।
পরবর্তীতে হাটহাজারী হযরতের ইন্তেকালের পরে মুফতি আযম আল্লামা মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামী রহ. এর ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় যুক্ত হন।