বাঁধন প্রধান,পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ আহমদিয়া কাদিয়ানী স¤প্রদায়ের জাতীয় সালানা জলাসাকে কেন্দ্র করে গত ৩ মার্চ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আরিফের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সোমবার দুপুরে উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে ঘটনার ৯৪ দিন পর হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকা বিক্ষোভে পুলিশ—বিজিবির সঙ্গে ধাওয়া পাল্লটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আরিফুর রহমান নামে ওই যুবক নিহত হয়। মামলার প্রেক্ষিতে সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মামহবুব ইসলাম লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশ একজন নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে লাশ উত্তোলন করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদশীর্রা জানান, নিহত আরিফ পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার মো ফরমান আলির একমাত্র ছেলে। আরিফের বাবা কাপড়ের বিক্রয়কমীর্ । আরিফ একটি প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী ছিল। ঘটনার দিন পঞ্চগড়—ঢাকা মহাসড়কের পাশে মসজিদপাড়া এলাকা থেকে অনেকের মত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল আরিফ। এমন সময় পুলিশ—বিজিবির একটি দল রাবার বুলেট ও গুলি,টিয়ারশের নিক্ষেপ করতে করতে এগিয়ে আসে। এ সময় আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিটি তার মাথার পেছনের অংশ দিয়ে প্রবেশ করে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রংপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করেন। পথে অ্যাম্বুলেন্সে তার মৃত্যু হয়।
আরিফ নিহত হওয়ার পর পুলিশ আরিফকে শিবির কমীর্ হিসেবে দাবি করেন। স্বরাস্ট্র মন্ত্রী গণমাধ্যমে আরিফকে শিবির কমীর্ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু আরিফ কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল না। আরিফ দীর্ঘদিন প্রথম আলো বন্ধুসভার সাথে কাজ করতো। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল।
নিহত আরিফের বাবা ফরমান আলী কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, আরিফের লাশ উত্তোলনের বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি। এলাকার মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ উত্তোলন দেখতে এসেছি। তিনি বলেন, ঘটনার দিন গভীর রাতে পঞ্চগড় থানায় ইটপাটকেলের আঘাতে আরিফের মৃত্যু হয়েছে এবং কোন দাবি নাই এমন লেখা সম্বলিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে লাশ ফেরত দেওয়া হয়। পরদিন সকালে পঞ্চগড় পৌরসভার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। যেহেতু মামলা হয়েছে। পোস্টমর্টেম হচ্ছে সেহেতু আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলে গুলিতেই মারা গেছে। গুলি মাথার পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ করে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আরিফের মা কবরস্থানে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পযার্য়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
মামলার বাদি পঞ্চগড় থানার উপ পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন জানান, আরিফ নিহত হওয়ার ঘটনায় বাদি হয়ে তিনি ঘটনার চার মাস ছয়দিন পর গত ৪ জুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতদিন পরে কেন হত্যা মামলা? এমন প্রশ্নে তিনি ওসি সাহেবের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে লাশ ময়না তদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। কৌশলগত কারণে অভিভাবকদের জানানো হয়নি। এতদিন পরে কেন হত্যা মামলা ? এমন প্রশ্ন তিনিও এড়িয়ে যান।