মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০০২ সালে হারিয়ে যান মতিউর। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেলেনি কোন সন্ধান। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন তার বাবা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২১ বছর পর অবশেষে ভারত থেকে ছেলেকে ফেরত পেলেন বাবা-মা। এখন তিনি ৩৬ বছরের মধ্যবয়সী যুবক। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ২২ জুলাই শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে দেশে ফেরেন মতিউরসহ ভারতের শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নিতীশ শর্মা এবং চিকিৎসক সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার। জানা গেছে, মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলামের বড় ছেলে। পরিবারের ধারণা, আখানগর ইউনিয়নের কান্তিভিটা ধোনতলা সীমান্ত হয়ে ভারতের পাচির সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুর যান। ২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে মতিউরকে উদ্ধার করেন ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন’ এর সমাজকর্মীরা। এ সংস্থার পক্ষ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মতিউরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে সিজোফ্রোনিয়া রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা পুনর্বাস ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে তিনি সুস্থ হন। সুস্থতার পর মতিউরের কাছেই পরিবারের পরিচয় জানতে পারেন সংস্থাটির কর্মরত ব্যক্তিরা। সংস্থাটির সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা তার বাংলাদেশের দুই বন্ধুর মাধ্যমে মতিউরের পরিবারের খোঁজ পান। তাদের সহযোগীতায় প্রথম ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা মা সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মতিউর। এরপর দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসেন মতিউর। এদিকে, তাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন বাবা মা সহ মতিউরের স্বজনরা। সাথে ছিলেন একমাত্র বোন সাইফুন্নাহার সহ পরিবারের সদস্যরা। আনন্দে কেঁদে ফেলেন তারা। দেশে ফিরে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি কখনোই ভাবতে পারিনি দেশে ফিরে মা-বাবার কোলে আসতে পারব। আমি অসুস্থ ছিলাম, যারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে দিল আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘খোদার কাছে সন্তানের জন্যে কেঁদেছিলাম, খোদা আমার কথা শুনেছেন।’মতিউরের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান হারানোর কষ্ট যে কত কঠিন তা সবাই বুঝতে পারবে না। আমার পরিবার সেই কষ্ট বুঝেছে। যারা আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’
মতিউরের ছোট বোন সাইফুন নাহার বলেন, ‘আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি তখন ভাইকে হারিয়েছি।’
ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন’ এর সমাজকর্মী নিতীশ শর্মা বলেন, ‘আমরা পথ প্রান্তর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি। মতিউর রহমানকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।’চিকিৎসক সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার বলেন, ‘মতিউরকে সুস্থ করতে পেরে তারাও স্বার্থক।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন আখানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোমান বাদশা।