সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রামঃ সারি সারি পাকা ঘর, রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দেখলেই মনে হয় এটি একটি সাজানো গোছানো গুচ্ছ গ্রাম। সাজানো গোছানো এই পল্লীটি গড়ে উঠছে অবহেলিত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরিজনদের জন্য। প্রশাসনের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারে তারা এখন বুনছে সুখের স্বপ্ন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরিজনের ৩০ পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের ঠিকানা হলো শান্তির নীড়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে সারাদেশে সাথে হরিজন পরিবারের এ ঘরগুলোর উদ্বোধন করবেন। এ নিয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্হানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।
অনুসন্ধানে জানাযায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার একটি গোষ্ঠী হরিজন। যারা সকলের কাছে সুইপার হিসাবে পরিচিত। এদের ছিল না নিদিষ্ট কোন ঘর, না ছিল নিদিষ্ট কোন জায়গা। উপজেলা বাজার, রমনা রেল স্টেশন, উপজেলা বিভিন্ন পরিত্যাক্ত ঘরসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এদের বাস। লজ্জা ত্যাগ করেই পরিত্যাক্ত কোন কোন ঘরে এক সাথে স্বামী, স্ত্রী, কন্যা, ছেলে, ছেলের বউকে থাকতে হতো। নিদিষ্ট কোন জয়গা না থাকায় জীবন ছিল যাযাবরের মতো। বিষয়টি দিষ্টিতে আসলে উদ্যোগ গ্রহন করেন প্রশাসন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জায়গাসহ ঘর মেলে তাদের ভাগ্যে। উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রে বাজারের পাশেই এক একর জায়গা ক্রয় করে ৩০টি পরিবারের প্রায় দেড়শতাধিক মানুষের জন্য পাকা ঘর নির্মান করা হয়। গড়ে তোলা হয় হরিজন পল্লী। প্রবেশের রাস্তাসহ চারদিকে রোপন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ। এছাড়াও তাদের দাবির পেক্ষিতে পাশেই নেয়া হয় শ্মশানের জন্য জায়গা।
চিলমারী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও পরিকল্পনায় পল্লীটি এমন ভাবে সাজানো হয়, যা নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। ঘর গুলো এমন ভাবে নির্মান করা হয় প্রতিটি পরিবারের ঘরের সামনে রাখা হয় বেশ বড় উঠান। ঘর গুলো পরিকল্পনা মতাবেশ নির্মান এবং চারদিকে রাস্তা সাথে গাছের চারা রোপন করায় দেখলেই মনে হয় একটি মনোরম পরিবেশের পরিপাটি সাজানো গোছানো গ্রাম মন্তব্য করেন এলাকার ফুলমিয়াসহ অনেকে। তারা আরো বলেন শুধু তাই নয় রাতের আধারে বিদ্যুতের বাতির আলোতে ঝিলমিল করতে দেখা যায় পল্লীটিকে। বাকি কাজ গুলো শেষ হলে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। মিস্ত্রি সিতিশ চন্দ্র বলেন, ঘরগুলো তৈরি করতে যা ব্যবহার করা হয়েছে এবং মজবুত করা হয়েছে সাধারন কেউ নিজের বাড়িতেও তা করে না। বসবাসরত পারুল জানান, হামার ছিল না নিজস্ব জায়গা, ছিল না থাকার ঘর, ছাওয়া পাওয়া নিয়ে কষ্টে ছিলাম, সরকারের দেয়া ঘর পেয়ে একটা ঠিকানা পাইছি। সুমি, রুমাসহ বেশ কয়েকজন হরিজন সম্প্রদায়ের মহিলারা বলেন, মানুষজন আমাদের একটু অন্য নজরে দেখে, যেন ঘৃণা করে, থাকার মতো বাড়িঘর না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাসমান জীবন যাপন করতাম, প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পাইছি এখন আমরা সুখ পাইছি।
নেমু লাল বলেন, যদিও খাওয়া তেমন কষ্ট ছিলনা, কিন্তু থাকার কষ্ট ছিল, ৮/১০ মিলে ছোট একটা ঘরে বা অন্যের দোকানের বারান্দায় রাত কাটতো, এখন আর সেই কষ্ট নাই, দিন শেষে হলেও একটা নিজস্ব থাকায় স্থান করে দিয়েছে সরকার। তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যার (সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান) আমাদের বারবার খোঁজ খবর নিতেন, ঘর গুলো যেন ভালো ভাবে হয় সব সময় দেখতে আসতেন, আমাদের সাথে এতো ভালো আচরন করতেন আমাদের মাঝে মাঝে তা স্বপ্ন মনে হতো। মনি লাল বলেন, স্বপ্নেরও ভাবিনি এতো সুন্দর ২টি ঘর, বারান্দা, রান্না ঘর, ঘরের সাথে বাথরুম, পানির ব্যবস্থা সাথে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, আছে ঘরের সামনে উঠান।
এমন উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল অরীফ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, হরিজনদের জন্য একটি হরিজন পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে, এতে থাকবে খেলার মাঠ, শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা, এটি একটি মডেল হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে।