তাহিরপুর,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হুসেন এক, তাও্বিক,আর রাজনীতির রহস্য পুরষ, তিনি সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) থেকে ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকে এ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ১৫ অক্টোবর ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। পরে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো বিএনপি থেকে একই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নজির -হোসেন ১৯৪৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে জনাব মোঃ আব্দুল গণী ও সুয়েতুন নেছার ঔরসে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এটি ঐতিহাসিক লাউর রাজ্যে কাগজী পরিবার নামে খ্যাত এক ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভ্রান্ত বংশ। নজির হোসেনের পত্নী সালমা আক্তার একজন ব্যাংকার।
শিশুকাল থেকেই নজির -হোসেন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে স্কলারশিপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বৃত্তি পেয়েছেন। অষ্টম শ্রেণি পাশের পর মায়ের কাছ থেকে চার আনা পয়সা চেয়ে নিয়ে সেই ১৯৫৭ সালে ভাগ্য এবং নিজের দৃঢ় মনোবলের উপর নির্ভর করে বাড়ী থেকে অজানার পথে বেরিয়ে পড়েন।
নজির হোসেন ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । ১৯৬৬ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬৮ সালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করে কঠোর অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে সিলেট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন । ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ।
৬৯ সালের শেষের দিকে সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির দায়িত্ব লাভ করে দলকে সংগঠিত করতে সুনামগঞ্জ চলে আসেন।সুনামগঞ্জ মহকুমার গোপন কমিউনিস্ট সেলের প্রধান ছিলেন জনাব নজিরহোসেন ৷কমিনিষ্ট পার্টি ন্যাপ(মোঃ)ছাত্রইউনিয়ন(মতিয়া)ও কৃষক সমিতি পরিচালনা করতো ৷জনাব নজির হোসেন ১৯৭১ সুনামগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সহসম্পাক নিযুক্ত হন ৷জনাব নজির হোসেনর উদ্দোগে টেকেরঘাট গেরিলা জোনটি গড়ে ওঠে ৷
১৯৭১ সালে জুনের প্রথম দিকে শিলং এর সানী হোটেলে কমরেড বরুণ রায়, পীর হাবিবুর রহমান, বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সরদার লতিফের উপস্থিতিতে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তের আলোকে টেকেরঘাট সাব সেক্টর একটি গেরিলা যুদ্ধের জোন হিসেবে গড়ে ওঠে । বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সেক্টর কমাণ্ডার ও নজির হোসেন টেকেরঘাট সাব সেক্টরের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৭২ সালে তিনি সুনামগঞ্জ মহকুমা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ।
১৯৭৪ সালে ১৮ মাস ব্যাপী রাজনৈতিক পড়াশুনার জন্যে মস্কোতে ছিলেন । ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪ বছর আত্নগোপনে ছিলেন এবং মুস্তাক সরকার বিরুধী শশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের স্বার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ৷ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৫ সালে নিরাপত্তা আইনে ৬ মাস কারাবরণ করেন।
সুনামগঞ্জের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নজির -হোসেন ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন । জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাসান পানির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন, তবে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কখনো পিছপা হন নি। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবি থেকে ৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়ে নজির -হোসেন প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন ।একজন নজির হোসেন তৈরি হতে দীর্ঘ পরিক্রমা পার হতে হয়েছে। এই তাত্বিক রাজনীতিবীদের সফলতা কামনা করছে নির্বাচনী এলাকার জনগন।