মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিকভাবে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৃহস্পতিবার (জুন ১৫) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০২৩ মেয়াদে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪১.৫ শতাংশ থেকে প্রায় ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.৫ শতাংশে থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সহ হত্যার পর, যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশের মানুষের উন্নয়নে কিছুই করেনি। গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বাড়ি বিতরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরেও চাপ সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা অবশ্য বলেন, তার সরকার এই চাপ কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে।
একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে ভিশন থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের রূপকল্প ঘোষণা করেছিল এবং সেই রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকার রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি সহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল সহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।