মোঃ আসাদুজ্জামান: এবার নতুন ঘরে মাথা গোজার ঠাই মিলল প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোনের। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি লিপি দাস (২৬) ও শিমুল দাস (২২)। তাদের জন্মের পর থেকেই ২০/২৫ বছর বাড়ির উঠানে এক ঝুপড়ির মধ্যে কাটছিল দূর্বিসহ জীবন। তাদের অসহায়ত্বের ওই করুন অবস্থা দেখেই কালীগঞ্জ ইউএনওর সার্বিক প্রচেষ্টায় করা হয়েছে ওই নতুন ঘরের ঠিকানা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, ইউএনও, উপজেলা মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান সহ এনজিও ও গনমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিতি থেকে তাদেরকে ওই ঘরে তোলা হয়। প্রতিবন্ধি ভাই বোন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গি গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন দাসের সন্তান।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, বেশ কিছুদিন আগে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরনের ছবিতে এক মহিলাকে শুয়ে থেকে খাবার গ্রহনের চিত্র দেখেন। এতে কৌতুহল বশত বিষয়টি জানার আগ্রহ হয়। এর কয়েকদিন পর তিনি সরেজমিনে ওই বাড়িতে যান। সেখানে দেখতে পান বসত ঘরের অভাবে বাড়ীর উঠানে একটি টিনের ছাবড়ার নিচে প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোন শুয়ে আছে। বিষয়টি তার মনে বেশ দাগ কাটে। তখনই পরিকল্পনা করেন তাদের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করার। সে মোতাবেকই তিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও কিছু এনজিও প্রতিষ্টান সহ সুধীজনদের আর্থিক সহায়তায় ওই পাকা ঘরের নির্মান কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান, এতিম দুই প্রতিবন্ধি পরিবারের জন্য আরো সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
এনজিও কর্মী সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবুপদ বিশ^াস জানান, ইউএনও স্যারের মানবিকপ্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোনকে একটি ঘর নির্মান করে দেওয়া হয়েছে। ইট ও টিনের তৈরি ঘরটি নির্মানে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
ঘর প্রদানকালে প্রতিবন্ধিদের বাড়িতে উপস্থিত তার বড় ভাই হতদরিদ্র ভ্যান চালক রিপন দাস জানায়, তার দুই ভাই বোন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। চলাফেরা এমনকি নিজেরা হাত দিয়েও ঠিকমতো খেতে পারে না। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে তাদের বাবা ও তারই এক বছর পরই মা মারা গেছেন। সেই থেকেই প্রতিবন্ধি ভাই বোনকে পিতৃ¯েœহে আগলে রেখেছেন তিনি। নিজে ভ্যান গাড়ী চালায়। স্ত্রী অন্যের পান বরজে কামলা খাটে। তাদের দু’জনের আয়ে কোনরকমে চলে সংসার। এখন ঘরের ব্যাবস্থা হলেও প্রতিবন্ধি ভাই বোন সহ পরিবারটির ভরনপোষন নিয়েও দুঃচিন্তায় কাটে দিনগুলি।
রিপন দাস আরো জানায়, সংসারে তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোন নিয়ে ৬ সদস্যর পরিবার। ভীটে বাড়ি ছাড়া মাঠে তাদের কোন জমাজমি নেই। প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোনের সরকারী ভাতার কার্ড আছে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা দিয়ে মাসের খাবার তো দুরের কথা, ঔষধ কেনার টাকাও থাকে না। কিভাবে তার ভাই বোনদের জীবন বাচিয়ে রাখবেন এ শংকা যেন কাটেই না।
এ সময়ে ওই বাড়িতে উপস্থিত কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, পরিবারটি অত্যান্ত অসহায়। প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোন সহ পরিবারটির জন্য তারা আরো সহযোগিতার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ পারভীনও পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে একমত প্রকাশ করেন।