মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীতে সরকারি ১৯ শতক জমি বিক্রয়ের জন্য সাইনবোর্ড টাঙানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩ মাস ধরে ঝুলছে সেই সাইনবোর্ড। স্থানীয়রা বলছেন, এই জমিটি সরকারি। হঠাৎ বিক্রির সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন স্থানীয় রিয়াজুল ইসলাম বান্ডিল নামে এক ব্যক্তি। সরকারি জমি বিক্রির এমন বিজ্ঞাপন দেখে বিস্মিত এলাকার লোকজন। তবে রিয়াজুল ইসলাম বান্ডিল দাবি করছেন, ৩ যুগ আগে একটি প্রকল্পের কাজে সরকারকে ১৯ শতক জমি দিয়েছিলেন ঐ এলাকার খতেজা বেগম নামে এক নারী। তাঁর দাবি, উচ্চ আদালতে রিট করে তিনি এ জমি ফেরত পেয়েছেন। এখন তাঁর মাধ্যমে জমিটি বিক্রি করতে চান খতেজা বেগম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৮০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঐ জমিতে কুটির শিল্প নামে একটি প্রকল্পে স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। ঐ সময় জমিটি খতেজা বেগম সরকারকে দান করেছিলেন। প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর থেকে জমি এবং সেখানে নির্মিত ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ৩ মাস আগে ঐ জমির বিক্রির সাইনবোর্ড টাঙানোর পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। সম্প্রতি সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির ওপর নির্মিত ঘর ভেঙে যাবতীয় ইট ও মালামাল নিয়ে গেছেন রিয়াজুল ইসলাম বান্ডিল। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে গড়ে ওঠা গাছপালা কেটে পরিষ্কার করাচ্ছেন ৩ জন শ্রমিক দিয়ে। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল জমির পশ্চিম পাশে টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা আছে, ‘এই জমি বিক্রি করা হবে।’ শ্রমিক পল্টু ও দিপু জানান, এই জমির ঝাড়-জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য ৩ জনকে চুক্তি দিয়েছেন রিয়াজ উদ্দীন বান্ডিল। জমির মালিক কে, কে বিক্রি করবে—এসব তাঁরা জানেন না। সাইনবোর্ডে লেখা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ওপার থেকে রিয়াজুল ইসলাম বান্ডিল বলেন, ‘জমিটি খতেজা বেগম সরকারকে দিয়েছিলেন, তিনি আবার আদালতে রিট করে জমি ফেরত পেয়েছেন। এখন জমিটি বিক্রি করা হবে, কিনলে আমার মাধ্যমে কিনতে হবে। তিনি এখন সেটা দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তাঁর নিকট কাগজপত্র চাইলে তিনি কাগজপত্র জোগাড় করে নিতে বলেন, এরপরে তাঁর সঙ্গে একাধিকার যোগাযোগ করেও তিনি কাগজপত্র দেননি।’ এদিকে খতেজা বেগম ও তাঁর পরিবার বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করেন। তাঁর মোবাইল নম্বর না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ আদালতে রিট, এরপরে জমি বিক্রি বিজ্ঞাপন এবং স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও জমিটি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। এসব অভিযোগ ও জমির মালিকানা–সম্পর্কিত তথ্য জানতে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে চাড়োল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, জমিটির মাঠপর্চা কিংবা নামজারির জন্য এখন পর্যন্ত কেউ অফিসে আবেদন করেনি। তবে সাইনবোর্ড টাঙানোর বিষয়ে তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অবগত হওয়ার পর সরেজমিন প্রমাণ পেয়েছেন। জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসাইন বলেন, ‘উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন জমি দানকারী খতেজা বেগম। আদালত তাঁকে জমিটি ফেরত দিয়েছেন ব্যবহারের শর্তে। যদি সেখানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পুনরায় প্রকল্প চালু করে, তাহলে ফেরত দিতে হবে এই জমি। জমিটি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন—এমনটি রায়ে কোথাও বলা নেই।’ এসি ল্যান্ড আরও জানান, উচ্চ আদালতে করা রিটে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ভূমি অফিস অথবা ইউনিয়ন ভূমি অফিস কাউকেই বিবাদী করেনি। সমাজসেবা অফিসের একটি অতিরিক্ত সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। জমিটি রয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে। উচ্চ আদালত সঠিক তথ্য গোপন করা হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক বলেন, ‘২০১৭ সালে আদালত থেকে রায় পেয়েছে শোনা যাচ্ছে। সাইনবোর্ড টাঙানোর পর আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। সঠিক তথ্য এবং কাগজপত্র উপস্থাপন করে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এবং ওই জমিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যক্রম চালু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’ জমিটি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতাও চান তিনি। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লাহিড়ী বাজারের সাবরেজিস্ট্রার অফিসের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ঐ ১৯ শতক জমি। স্থানীয়রা বলছে এই জমির বাজারমূল্য কমপক্ষে ৬০ লাখ টাকা।