সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।।শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মানেই সবকিছু থেমে যাওয়া নয়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন ১৭ বছরের মোবারক আলী। দুই হাতে কব্জি না থাকলেও পড়াশুনা থেমে থাকেনি তার। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কব্জি দিয়েই লিখেছিলেন। অবশেষে জিপিএ-৩.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণও হয়েছেন। এতে তার মা-বাবাও বেশ খুশি।
অদম্য মেধাবী ছাত্র মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেষা কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। শিক্ষা জীবনের শুরুতে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পা দিয়ে লেখালেখি করেছেন। পরবর্তীতে দুই হাতের কব্জি দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে কব্জি দিয়েই লেখালেখিতে পারদর্শী হন তিনি।
২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন। পরিবারের অভাব অনটনের পরও সামনের দিনগুলোতেও পড়াশুনা চালিয়ে যতে চান মোবারক।
তিনি বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়াশুনার খরচ যোগান দেওয়া খুবই কষ্টের। এরপরও আমি চেষ্টা করে যাবো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারি।
মোবারক আরও বলেন, লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চাই। যেন দরিদ্র ও অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়াতে পারি। এছাড়া শিক্ষকতাই আদর্শ পেশা।
মোবারক আলীর বাবা এনামুল হক বলেন, আমরাও মোবারক আলীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছে। আমার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মোবারকের চাহিদা সবসময় মেটাতে পারি না। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো মোবারক যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তার জন্য সব সময় দোয়া ও ভালবাসা থাকবে।
সহপাঠী শরিফুল ইসলাম বলেন, মোবারক হাতের কব্জি দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেকের চেয়ে সুন্দর ও ঝকঝকে। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সে দক্ষ। তার অনেক গুণ আছে।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম বলেন, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড় । সে নিজের প্রায় সবকাজই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। এরপরও তার উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও সে যথেষ্ট মেধাবী। তার ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, উচ্চতর গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ‘এ প্লাস’, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, রসায়ন,আইসিটি ও প্রাণীবিজ্ঞান বিষয়ে ‘এ’, এবং গণিত বিষয়ে ‘এ মাইনাস’, দুটি বিষয়ে বি ও একটি বিষয়ে ‘ডি’ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মোবারক শুধু পড়াশুনায় নয়, সে খেলাধুলায়ও যথেষ্ট মেধাবী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে স্কুলের প্রতিবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বরাবরই পুরস্কৃত হতো। সে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রচেষ্টা ও এসএসসির ফলাফল স্কুলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। সে শুধু স্কুলের নয় সমগ্র উপজেলাবাসীর গর্ব।
কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক জাগো নিউজকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক এসএসসি পাস করায় আমরা ইউনিয়নবাসী গর্বিত। প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। আমি চেষ্টা করবো তাকে সহায়তা করার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জাগো নিউজকে বলেন, মোবারকের মতো শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে দেশ। আমরা উপজেলা প্রশাসন মোবারককে পড়াশুনায় এগিয়ে নিতে সহায়তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।