এম এস সজীবঃ মা ইলিশ রক্ষায় শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বরগুনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অভিযানের সময় সঙ্গে থাকা বরগুনার দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ জেলা মৎস্য বিভাগের মোট পাঁচজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
আহতরা হলেন, মৎস্য বিভাগের কর্মচারী মো. মাসুম হাওলাদর ও মো. পলাশ খান এবং ছাত্র প্রতিনিধি শিক্ষার্থী মো. আতিকুর রহমান ও মো. রাকিবুল ইসলাম বাধন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩ টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাছ বাজারে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ অভিযানের সময় এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার মধ্যরাত থেকে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২২ দিনের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বরগুনা পৌরসভার মাছ বাজারের কিছু ব্যবসায়ী রাত ৩টা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি করেন। পরে ইলিশ বিক্রি বন্ধ করতে জেলা মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এক আড়তদারের নিকট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা ইলিশ মাছ জব্দ করাসহ জরিমানা করা হয়। পরে জব্দকৃত মাছ নিয়ে আসার সময় অভিযানে উপস্থিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করেন ব্যবসায়ীরা। এতে মৎস্য অধিদপ্তরের দুই কর্মচারীসহ ছাত্রদের দুজন প্রতিনিধি আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের মধ্যে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রহরী মো. মাসুম হওলাদর বলেন, বাজারে যারা মাছ বিক্রি করেন তাদেরকে দুই থেকে তিনবার আমরা বলেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ বিক্রি শেষ করতে। এ সময় তাদেরকে রাত ১টা পর্যন্ত সময় দিলে রাত ২টার দিকে গিয়ে দেখি তারা মাছ বিক্রি করছেন। পরে মৎস্য কর্মকর্তাসহ পুলিশ নৌবাহিনীর লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জরিমানা করেন। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাছ ফেলে দেওয়াসহ আমাদেরকে সহযোগিতাকারী ছাত্রদের দুজন প্রতিনিধিকে মারধর করেন। পরে সেখান থেকে চলে আসার সময় প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মিলে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে ও মারধর করেন।
মৎস্য বিভাগে কর্মরত মো. পলাশ খান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, মাছ বিক্রির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে থাকা মাছগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে সে মাছ এতিমখানা বা অসহায়দের দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের ওপর হামলা চালান।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে মৎস্য কর্মকর্তাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্র বাজারে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযানের কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে মাছ বিক্রি বন্ধ করতে বলেন। ওই সময় তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়েছে শুনেছি। এ ঘটনায় মৎস্যজীবী সংগঠনের যারা আছেন তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও বলেছেন তারা। আমরা তাদের সহযোগিতায় প্রকৃত ঘটনা বের করার চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, রাতে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযান পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এতে মৎস্য বিভাগের দুজন এবং ছাত্রদের মধ্যে দুজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।