

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিক রাজীব আলী রাতুলসহ সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ ভয়াবহ চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা নেওয়া বরখাস্ত এসআই মাহবুব হাসান ( ডিবি হাসান নামে পরিচিত) জনতার হাতে ধরা পড়েছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরের হজোর মোড়ে স্থানীয়দের গণপিটুনির পর রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক রাজীব আলীর বাবা মাসুদ রানা এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান সাদা পোশাকে তাদের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্রের মুখে তার ছেলেকে অপহরণ করেন। পরে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে রাজীবকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেন তিনি। এ মামলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করতে হয় রাজীবকে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর হাসানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন, ‘টাকা চাইলে এবার মেরেই ফেলা হবে।’ স্থানীয়দের দাবি, চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই হাসান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ডিবিতে যোগ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালান তিনি। সাধারণ মানুষকেও ভয় দেখিয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির শিকার করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, এই সেই হাসান, যে মিথ্যা মামলায় অসংখ্য মানুষকে কারাগারে পাঠিয়েছে। সাংবাদিক রাজীব আলীও তার শিকার হয়েছেন। আজ মানুষ কথা বলছে, তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। চন্দ্রিমা থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসানকে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বোয়ালিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার থানায় হাসানের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, মাহবুব হাসান সর্বশেষ ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এভাবেই সাংবাদিক রাজীব আলীকে ফাঁসানো থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়নের দীর্ঘ অধ্যায়ের শেষ হলো জনতার হাতে বরখাস্ত এসআই হাসানের পতনে। হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ২০১৩ সালে এসআই নিয়োগে তার চাকরি হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রাজশাহী নগরের মতিহার থানায় ছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগদান করেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে গত বছর চাকরিচ্যুত হন তিনি।