

(আমেনা বেগম (জুঁই)-এর সংগ্রামের গল্প) জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে কিছু মানুষ আপন আলোয় আলোকিত করে চলে। আবার হঠাৎ করেই অশ্রুর সাগরে ডুবে যায় মন, তবুও থেমে থাকে না পথচলা। এমনই এক জীবনের সংগ্রামী আমার মেয়ে আমাদের সামনে—আমেনা বেগম (জুঁই)। ৪৯তম বিসিএস (শিক্ষা) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুঁই। এটি কেবল একটি পরীক্ষা নয়, বরং তার স্বপ্ন, তার মায়ের আকাঙ্ক্ষা, আর নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার পথ। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে চলতে গিয়ে তাকে সহ্য করতে হয়েছে জীবনের সবচেয়ে কঠিন আঘাত। গত ৮ই এপ্রিল তার প্রিয় মা মরহুমা সাবিনা ইয়াসমিন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। প্রিয় মায়ের বিদায় যেন তার জীবনের শূন্যতা আরও গভীর করে তুলেছে। মায়ের অনুপস্থিতি মানে শুধু একজন অভিভাবকের হারানো নয়, বরং হৃদয়ের এক চিরকালীন অপূর্ণতা। তবুও জীবনের স্রোত থেমে থাকে না। জুঁই প্রতিদিন সকালবেলা বই হাতে নেয়, আরেক হাতে সংসারের নানা দায়িত্ব পালন করে। রান্নাঘরে হাঁড়ি-পাতিলের শব্দ মিশে যায় পাঠ্যবইয়ের পাতার উল্টানো শব্দে। একদিকে পাত্রে ভাত সেদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে টেবিলে খোলা রয়েছে বাংলা সাহিত্য,বিসিএস গাইড বা শিক্ষা প্রশাসনের বই। তার এই দ্বৈত সংগ্রাম আমাদের চোখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জীবনের ব্যথা, ব্যক্তিগত শোক আর দৈনন্দিন দায়িত্ব সামলিয়ে সে এগিয়ে চলেছেন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে। মায়ের স্মৃতি তাকে কাঁদায়, কিন্তু একই সাথে অনুপ্রেরণা জোগায়—“মা থাকলে নিশ্চয়ই বলতেন, হাল ছেড়ো না, এগিয়ে চলো।” আজ জুঁই-এর গল্প শুধু একজন পরীক্ষার্থীর গল্প নয়, এটি প্রতিটি তরুণীর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবতা একসাথে পথচলা করে। হয়তো এই পথ সহজ নয়, তবুও তার ভেতরে আছে দৃঢ় সংকল্প, মায়ের স্মৃতির শক্তি আর নিজের ইচ্ছাশক্তি। আমার মেয়ে আমেনা বেগম (জুঁই)-এর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই — আল্লাহ তাআলা তাকে পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দান করুন, তার মায়ের রুহের মাগফিরাত করুন এবং জীবনের প্রতিটি ধাপে তাকে আলোকিত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাক সেই প্রত্যাশায় রইলাম । # বাবা মোঃ মহিউদ্দিন কবি, সাহিত্যিক, প্রফেসর