লিপন খান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জে ইজারা জুলুম ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মাছ ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে নতুন ইজারাদার ইজারা তুলতে আসলে মাছ বিক্রেতাদের সাথে ইজারার টাকা নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ায় ও মাছ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয় এ নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে এ ঘটনায় মিছিল শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ২ টি টিম কাজ করে।পরবর্তীতে বিকালে শহরের পুরানথানা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলটি বের করে কিশোরগঞ্জ শহর মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। পরে তারা থানায় গিয়ে ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে বাজারগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা। এদিন বিকালে সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতারা মাছ মহালে ভিড় করলেও ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি বন্ধ রাখায় মাছ কিনতে পারেননি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ক্রেতারা।
কিশোরগঞ্জ শহর মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুকছেদ মিয়া জানান, গত বছর বড় বাজার মাছ মহালটি যখন কেউই ইজারা নিতে চায়নি, তখন মেয়র সাহেব আমাদের ডেকে নিয়ে ১০ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন। আর এ বছর একই মাছ মহাল ২৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন অন্য একজন। এবার যিনি ইজারা নিয়েছেন তিনি বাড়তি টাকা আদায় করার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাজারে ঢুকেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত বছর যে বাজার ১০ লাখ টাকায় ডেকে এনে আমরা লোকসান গুনেছি, এবার একই বাজার ২৫ লাখ টাকা ইজারা দেওয়া হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুমটা কেমন হবে, এ থেকেই বুঝতে পারছেন। তিনি বলেন, মাছের প্রতি ডালা দৈনিক পাঁচ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দাবি করছেন ২০০ টাকা। সে কারণে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার হবে।
কিশোরগঞ্জ শহর মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো.আলম মিয়া জানান, পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরজু মিয়া বড়বাজার মাছ মহালটি ইজারা নিয়েছেন। ইজারা নিয়েই তিনি এবং তার লোকজন খাজনার তালিকা ছাড়াই অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। মাছ ব্যবসায়ীরা বিনা রশিদে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যবসায়ীদের সাথে ইজারাদার আরজুর লোকজনের তর্ক হয়। একপর্যায়ে তারা মাছ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করে বলেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। এতে ৭/৮ জন মাছ ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। মাছ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার বিচার এবং ইজারার বিষয়টা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বড়বাজার মাছ মহলের ইজারাদার মো. আরজু মিয়া বলেন, ইজারা তুলতে গিয়ে আমার লোকজনের সাথে ব্যবসায়ীদের তর্কাতর্কি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, এই মাছ মহলটি গত বছর ইজারা নিয়েছিলেন তারাই। তখন তারাও বিনা রশিদে ১৫০-২০০ টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু এবার তারা দরপত্রের মাধ্যমে বাজার না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, ইজারাদার এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঝামেলার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ শুক্রবার সকালে মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বাসায় এসে অভিযোগ দায়ের করে।