স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান:
গেল বছর তরমুজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর অনেকে বেশি জমিতে তরমুজ চাঁষ করেছেন খুলনার
কৃষকরা। এবার হঠাৎ করে দরপতনে বেশ ক্ষতিতে পড়েছেন তারা।এদিকে দাম না পাওয়ায় মাঠেই পচে যাচ্ছে রসালো ফল তরমুজ।
হঠাৎ দরপত্তনে তরমুজ নিয়ে সোনালী স্বপ্ন দেখা চাষিদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। পানির দরে তরমুজ, নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা।এ বছর নাবিতে বাম্পার ফলন হওয়ার পর ও
বিক্রি করতে না পারায় দুশ্চিতায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
খেতে তরমুজের কোনো ক্রেতা নেই।বেচা কেনা ও বন্দ। ক্ষেত বিক্রি করতে না পারায় কৃষকরা তরমুজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন আড়াৎ নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেখানেও কাঙ্খিত দাম মিলছেনা এ কারনে খুলনার কৃষক সর্বশান্ত হতে চলেছে।খুলনার তরমুজ চাষ আবাদে ৭০-৭৫শতাংশই দাকোপের। গেল বছর ৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হলেও এ বছর খুলনায় ৭’হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে,তবে তরমুজের ফলন ও আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে শংকায় পড়েছেন চাষীরা। ফলে ৭০ শতাংশ কৃষকরা ভালো উৎপাদন থেকে বন্চিত হয়েছে
এ ছাড়া নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের পানির অভাবে তরমুজ আবাদে কৃষকদের লাভের সপ্ন ফিকে হয়ে আসছে ।
বাজুয়া এলাকার কৃষক অচিন্ত সাহা বলেন আমার নিজের খেত সহ বাড়তি খেত ক্রয় করে ভালো দামের আশায় ঢাকার ওয়াজ ঘাটে নিয়ে আসি এসেদেখি সেখানেও তরমুজের ব্যাপক চাপ মোকামেও দাম মিলছেনা।
কৃষক অনাদী বিশ্বাস বলেন,বড় ক্ষতি হয়েছে গত বছর এমন দামে বিক্রি হয়েছিল যে এবার ও ভেবেছিলাম, ভালো দাম পাব সেজন্য প্রথম দিকে কম দামে খেত ছাড়িননি। এখন ওই টাকাও পাওয়া যাবেনা। লাউডোবের কৃষক দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন ছয় বিষা খেত এর আগে তিললাখ টাকা দাম হয়েছিল কিন্তু সে সময় দেয়নি এখন ১৬ হাজার টাকা বিঘা দরে ছিয়ানব্বই হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে পচিশ হাজার টাকা।
দাকোপের বাজুয়া সেনমাঠ এলাকার জু স্কেল সাহেব বলেন , এক বিঘা জমিতে তরমুজ উৎপাদনে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এখন তরমুজের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাস আগেও তরমুজর দাম ছিল রমরমা। এখন দাম না পাওয়ায় তরমুজ মাঠেই ফেলে রাখতে হচ্ছে। স্কেল সাহেব আরও বলেন আমার আট বিঘা খেত আট লাখ টাকা দাম হয়েছিলো তখন দেইনি কিন্তু সেই আটবিঘা খেত দুইলক্ষ পচাত্তর হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
দাকোপের কৈলাশগন্জ কৃষক উজ্বল মন্ডল বলেন, মাঠে গাছ নেই। কিন্তু বড় বড় তরমুজ পড়ে আছে। বিভিন্ন এলাকার মাঠে তরমুজ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাপারী না আসায় কৃষকরাই তরমুজ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। কিন্তু মোকামে দাম মিলছে না।
বানিশান্তার কৃষক উৎপল সানা বলেন, তরমুজ উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এখন ২০ হাজার টাকাও দাম বলেন না। খুলনা শহরে নিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামেও প্রত্যাশিত দাম মিলছে না।
কৃষক দেবাশীষ বাইন বলেন, গত বছর লাভ দেখে এ বছর ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু এবার ৭ বিঘার তরমুজ বেচে খরচ ওঠেনি। আরও চার বিঘা জমির তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে।
খুলনার দাকোপের আনন্দনগর গ্রামের তরমুজ চাষি শেখ আবু সাঈদ বলেন, ৫-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ক্ষেত থেকে ১০-২০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। সেই তরমুজ বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাষির কাছ থেকে কম দামে তরমুজ কিনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুরের চাষি আরুণী সরকার বলেন, ৮ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এখন তরমুজ ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে। কেউ কিনতে আসছে না।
পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকার চাষি শাফায়াত হোসেন বলেন, মাঠে তরমুজের ঢল, বাজারমূল্য একেবারেই নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তরমুজ। আড়তে নিয়েও দাম পাচ্ছে না কৃষক।
তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে ট্রাকে আড়তে পৌঁছাতে ২০-২৫ হাজার টাকা, আড়তদারি ১০ শতাংশ, লেবার খরচ, আড়তে বিক্রির পর ভাড়া মেটাতে পারছে না কৃষক। আড়ত থেকে পালিয়ে আসছে কৃষক।
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামে কৃষক অনাথ মন্ডল বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এবার ৩ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তরমুজ করেছি। কিন্তু এবার বিক্রি করতে গিয়েই মাথায় হাত।
ডুমুরিয়ার শরাফপুরের আকড়া গ্রামের কুদ্দুস গাজী বলেন, যদি কেজিতে সাত-আট টাকাও পেতাম, তাহলে খরচ উঠে কিছু লাভ থাকত। এখন মাঠে যা আছে, তা আর আনার চেষ্টাও করব না। খরচ দিয়ে পারা যাবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রমজানের শুরুতে তরমুজ লাভজনক ছিল। ঈদের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তাই কৃষকরা হতাশ হয়েছেন।