মোঃ সাইফুল ইসলাম আকাশ নিজস্ব প্রতিবেদক,ভোলা: ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় টেকসই ব্লকবাঁধ ধসে নদীতে ডুবে লাইজু (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দেড় বছর বয়সী মরিয়ম নামের আরো এক শিশু আহত হয়েছে। ২ অক্টোবর সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ইলিশা তালতলি লঞ্চঘাটের উত্তর পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত লাইজু উপজেলার রাজাপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুর গ্রামের মৃত সিরাজের স্ত্রী। তিনি তিন সন্তানের মা। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি মাছঘাটে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি বাক প্রতিবন্ধী ছিলেন। আহত শিশু মরিয়ম ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। আহত মরিয়ম উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জুয়েলের মেয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে ইলিশা তালতলি লঞ্চঘাটের উত্তর পাশে সিসি ব্লক ধসে পড়ে। এসময় সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় লাইজু নামের ওই বাক প্রতিবন্ধী মহিলা নদীতে পড়ে যান। পরে স্থানীয় জেলেরা তাকে মৃত উদ্ধার করে। একই সময়ে ব্লক ধসে দুইটি জেলে নৌকার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নৌকায় থাকা মরিয়ম নামের দেড় বছর বয়সী এক শিশু নদীতে ডুবে আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ নিখোঁজ আছে কি না তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। ভোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মো. সুমন জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। তবে ভোলায় ডুবুরি দল না থাকায় বরিশালের ডুবুরি দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে কেউ নিখোঁজ আছে কি না তা দেখা হবে। ভোলার সদর মডেল থানার ওসি শাহীন ফকির বিপিএম জানান, নিহতের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, গত মাসের ৭ তারিখ থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাটের দক্ষিণে তালতলি লঞ্চঘাটের নিকটবর্তী ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পে ব্লকবাঁধের দুটি স্থানে সিসি ব্লকে ধস দেখা দেয়। পরে ৯ তারিখ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জিও টেক্সটাইল ব্যাগে বালু ভর্তি করে ফেলতে শুরু করে। ধস কমে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে আজ সোমবার থেকে আরো একটি যায়গায় ধসে এক জন নিহত ও এক জন আহত হয়েছে। এতে নদী পাড়ের মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয়রা আরো জানায়, ২০১৫ সালে ভোলার ইলিশা এলাকার মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনের ফলে তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গৃহহীন হয় হাজার হাজার মানুষ। ইলিশা ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাও নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধ ও চার কিলোমিটার নদী সংরক্ষণ সিসি ব্লক বাঁধ নির্মাণ করে। ২০২১ সালে এ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কাজ শেষ হওয়ার দুই বছরের মাথায় দুইটি স্থানের ৭০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। ধসে যাওয়া স্থান থেকে বেড়িবাঁধের দূরত্ব মাত্র ১৫ থেকে ২০ ফুট। এর কয়েক দিন পর একটি লঞ্চঘাটও ভাঙনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আবারও ব্লক ধ্বস দেখা দেয়ায় মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। এ ধস ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় বেড়িবাঁধও হুমকির মুখে পড়বে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভোলার ইলিশা ও রাজাপুর এলাকাটি দুটি নদীর মোহনা হওয়ায় উজানের স্রোতের কারণে নদীর গভীরতা বেড়ে ৮৫-৯০ ফুট হয়েছে। তাই এর আগেও দুইটি স্থানে ব্লক বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে প্রায় ২৮ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আজ সোমবার নতুন করে ৪০ মিটার এলাকার ব্লক বাঁধ ধসে এক জন নিহত হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জরুরী ভিত্তিতে আবারও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে।