শ্রীনগর(মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের দক্ষিণ মেদেনী মন্ডল এলাকায় বসবাসকারী মোঃ মোস্তফা মাদবর (১৮), একজন ইজিবাইক চালক সে ইজিবাইক চালিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ করতো। গত (১ অক্টোবর) বিকাল প্রতিদিনের ন্যায় সে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে মেদেনী মন্ডল (মিস্ত্রিপাড়া) এলাকার জনৈক সালেকের অটো গ্যারেজের উদ্দেশ্যে রওনা করে। মোস্তফা আনুমানিক রাত ৯:৩০ ঘটিকা হতে ১০:৩০ ঘটিকার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা থাকলেও ঐদিন রাতে সে বাসায় না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে কোন সাড়া না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। অতঃপর গ্যারেজ মালিকের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যে, মোস্তফা ঐদিন সন্ধ্যায় ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরদিন ২ অক্টোবর আনুমানিক সকাল ১০:০০ ঘটিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে জানতে পারে যে, মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার হলদিয়া এলাকার একটি ডোবা জমির পাশে ভিটির ঢালে পানির মধ্যে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে। পরবর্তীতে মোস্তফার বাবা ও তার আত্মীয়স্বজন উল্লেখিত এলাকায় গিয়ে লাশটি মোস্তফার লাশ বলে শনাক্ত করে। অতঃপর ভিকটিম মোস্তফার বাবা স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে লৌহজং থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। উক্ত ঘটনার পর মৃতের বাবা মোঃ আব্দুল হক মাদবর (৫০) তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করতঃ মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নম্বর-০১, ধারা- ৩০২/৩৯৪/২০১/৩৪ বিধি। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এবং র্যাব-৮ এর সহযোগীতায় বরিশাল জেলার গৌরনদী থানাধীন গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস ইজিবাইক চালক মোস্তফা হত্যাকানডের মূলহোতা মিরাজুল ইসলাম (২৮), পিতা-মৃত জয়নাল হাওলাদার, সাং-দক্ষিণ শাতলা, থানা-উজিরপুর, জেলা-বরিশাল, বর্তমান ঠিকানা- সাং-হলদিয়া তিন দোকান, থানা-লৌহজং, জেলা-মুন্সিগঞ্জ’কে গ্রেফতার করে। অতঃপর
গ্রেফতারকৃত মিরাজুল এর দেয়া তথ্যমতে ৬ অক্টোবর মাঝ রাত ১:১৫ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা উত্তর থানাধীন মাওয়া চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকানডের সাথে সরাসরি জড়িত অপর দুই আসামি ১। স্বপন ফরাজী (২৮), পিতা-মোঃ মোতালেব ফরাজি, সাং-দক্ষিণ মেদিনীমন্ডল, থানা-পদ্মা উত্তর থানা, জেলা-মুন্সিগঞ্জ ও ২। পাপ্পু সরদার (২৪), পিতা-নুরুল ইসলাম মনু, সাং-উত্তর পাকশিয়া, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ’দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মিরাজ উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। সে তার অন্যতম সহযোগী স্বপন ও পাপ্পুকে নিয়ে মোস্তফাকে হত্যা করে তার ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১ অক্টোবর আনুমানিক রাত ১৯:০০ ঘটিকায় মিরাজ, স্বপন ও পাপ্পু মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা উত্তর থানাধীন মাওয়া চৌরাস্তা এলাকা হতে ভিকটিম মোস্তফাকে মিরাজের ভাড়া বাসায় যাওয়ার কথা বলে মোস্তফার ইজিবাইকটি ভাড়া করে মিরাজের ভাড়া বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ১৯:২৫ হতে ১৯:৪৫ ঘটিকায় তাদের পূর্বপরিকল্পিত সুবিধাজনক স্থান মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন হলদিয়া এলাকায় পৌছালে মিরাজ মোস্তফাকে ইজিবাইক থেকে নামতে বলে। অতঃপর মোস্তফা ইজিবাইক থেকে নামার সাথে সাথে স্বপন মোস্তফার গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরলে মোস্তফা মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। মোস্তফা মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সাথে সাথে পাপ্পু মোস্তফার দুই পা চেপে ধরে এবং মিরাজ মোস্তফার মুখ মাটির সাথে চেপে ধরে যাতে করে মোস্তফা কোন ডাক-চিৎকার করতে না পারে। ভিকটিম মোস্তফার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মিরাজ, স্বপন ও পাপ্পু মিলে মোস্তফার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলের পাশে একটি ডোবায় ফেলে রেখে মোস্তফার ইজিবাইকটি নিয়ে দ্রত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
আসামি পাপ্পুর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানায় ১টি ছিনতাই মামলা এবং আসামি মিরাজের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার ১টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।