রাকিব হোসেন, ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারীতে বাবা-ছেলের প্রতারণার শিকার হয়েছে আল-মুসলিম নামে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আল মুসলিম গ্রুপ। ব্যবসায়ীর প্রতারণার মামলা এবং নাশকতায় সম্পৃক্ত থাকায় প্রতারক সৈয়দ আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ইজাজ কবীর রিমান্ড দিয়েছে আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী ডিবি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ইজাজ কবীরকে ওয়ারীতে সংঘঠিত ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে, তদন্তে তারা জালিয়াতি ও প্রতারণায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এ দিকে ডিবি সূত্র জানায়, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি সমাবেশ চলাকালে ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও নাশকতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়।
প্রতারণার শিকার আল মুসলিম গ্রুপের হেলাল খন্দকার ও মো. আব্দুল্লাহ জানান, কষ্টার্জিত প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দিয়ে ওয়ারী থানাধীন ১ নং নবাব স্ট্রীটে ৯২ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করি। তাদের কাছ থেকে আম-মোক্তার নামা ও চুক্তি দলিল পাই। সাব-কবলা দলিল করে দিতে বললেই আজহারুল কবির ও তার পরিবারের সদস্যরা নানা তালবাহানা শুরু করেন। আল-মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করতে থাকেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর তথ্য দিচ্ছেন তারা। এই চক্রের প্রতারণা ও জালিয়াতির কারনে প্রতিষ্ঠানটি আজ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই জমির প্রকৃত মালিক ছিল দেবেন্দ্র মোহন সেন গং। ১৯৫০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাফকবলা দলিলে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পক্তি ইব্রাহিম, খলিল, জলিল, ভকিল ও বসির ক্রয় করেন। যা তিনটি দাগে তাদের নামে প্রয়োজনীয় রেকর্ড হয়। আজহারুল কবির কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে এক ভাই খলিলকে ষোল আনা সম্পত্তির মালিক দেখিয়ে ১৯৭৪ সালের ২৩ জানুয়ারি একটি সাব কবলা দলিল করেন।
পরে আজহারুল কবীরের ভাই সৈয়দ জহিরুল কবির অপর চার ভাই ইব্রাহিম, বসির, ভকিল ও জলিলের অংশ কিনে নেন। সৈয়দ জহিরুল কবির ৭৩ দশকি ৬৪ শতাংশ নিজ নামে রেকর্ড করেন। অপর দিকে হাজেরা বেগম, মাহবুবুল হুদা ও সৈয়দ আজহারুল কবিরের নামে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ রেকর্ড হয়। জহিরুল কবির ৭৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে ১৯৭৮ সালের ১১ এপ্রিল ৬দশকি ১৪ শতাংশ বিক্রি করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ২১ আগস্ট জাকির হোসেন, খালেদা গংদের কাছে ১০ দশমিক ৫০ কাঠা সম্পত্তি বিক্রি করেন। সিটি জরিপে সৈয়দ জহিরুল কবির ও হুমায়ুন কবিরের নামে রেকর্ড হয় এবং জাকির খালেদা গংদের নামে আলাদা খতিয়ানে রেকর্ড হয়। এই অবস্থায় সৈয়দ আজহারুল কবির নিজেদের ৯২ দশমিক ০৫ শতাংশের মালিক দাবী করে আল মুসলিম গ্রুপের এমডি মোঃ আব্দুল্লার কাছে জমি বিক্রির জন্য ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট ১০ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বায়না নেন এবং নগদে আরও ৫ কোটি টাকা বায়না বাবদ নেন। বায়না দলিল দেওয়ার পর আম মোক্তার দলিল দিয়ে আল-মুসলিম বিল্ডার্সকে জমির আম মোক্তার নিয়োগ করেন। পরে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আরও একটি বায়না দলিল করেন তারা। জহিরুল কবির ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আম-মোক্তার ও চুক্তিনামা দলিল করে হেলাল খন্দকারকে ৪২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির দখল বুঝিয়ে দেন। ওই জমি হেলাল খন্দকারের দখলে আছে। অপর দিকে হুমায়ুন কবির একই তারিখে হেলাল খন্দকারকে দুটি আম মোক্তার নামা ও চুক্তি নামা দলিলের ৬ দশমিক ১৪ শতাংশের দখল দেন। সৈয়দ আজহারুল কবীরের মালিকানায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় মোঃ আব্দুল্লাহ মনোনীত হেলাল খন্দকারের অনুকুলে জহিরুল কবির থেকে দলিল করা হয়। এতে ১৩ কোটি টাকা ব্যায় হয়। জরিপে আজহারুল কবীরের মালিকায় আরএস ও সিটি সিটি জরিপে ত্রুটি দেখা যায়। জাকির আহম্মেদ ২০১৬ সালের ৩ মার্চ ১৭ দশতিক ৩৩ শতাংশ সম্পত্তি আমমোক্তার নামা ও চুক্তি দলিল অনুযায়ী হেলাল খন্দকারকে দেন। এতে ক্রেতার প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যায় হয়।
হেলাল খন্দকার মোট ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ দশকি ৩৭ শতাংশ সম্পত্তি চুক্তিনামা ও আম মোক্তার নামা বলে দখলে আছেন। কিন্তু আজহারুল কবীর ৪টি পে অর্ডারের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা, নগদে ৫ কোটি টাকা নিয়ে বায়না চুক্তি ও আম-মোক্তার দলিল করে দেওয়ার পরও সাফ কবলা দলিল করে দিচ্ছে না। এছাড়াও জহিরুল, হুমায়ুন, জাকির, আজিজসহ অন্য আত্মীয়রা জমি বিক্রি বাবত নিয়েছে আরও ২০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে, আল-মুসলিম গ্রুপের পরিচালক এস. এম আমজাদ হোসাইন বলেন, আমরা ১১ বছর আগে যাচাই বাছাই করে জমি কিনেছি। এরপরও আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমরা ৮ বছর ধরে ৬৬ শতাংশ জমির দখলে আছি। এরপরও তারা আমাদের কিছু জমির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। বরং তারা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ফেসবুক লাইভে এসে মিথ্যাচার করছে। এবিষয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যে কোন জমি কেনার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন সবাই।
বাবা ও ভাইয়ের প্রতারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে, আজহারুল কবীরের স্ত্রী রুমানা রিফাত এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
আটক ইজাজ কবিরের ব্যারিস্টার জাহান বলেন, আমাদের বাসার পাশে দুই বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আল-মুসলিম বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরোধ চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমরা সঠিক আইনি সহায়তা প্রত্যাশা করছি।(সূত্র-বাংলা বাজার)