ডেস্ক রিপোর্ট: মহামারী নামক বিষ (করোনা ভাইরাস) যেন মহাবিশ্বকে এক নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে বাস্তবতা আর টিকে থাকার লড়াই কতটা নির্মম। শিক্ষা ক্ষেত্রেও এই মহামারী কমলমতি মুকুল গুলোকে ছিটকে দিয়েছে গুটিতে পরিনত হওয়ার আগেই।
মাধ্যমিক বোর্ডের ওয়বসাইটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পায়, কোরোনাকালীন এবং করোনা পরিবর্তীতে মাধ্যমিক পর্যায়ে গত দু’বছরে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। দু’বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে নবম শ্রেণিতে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করেছিল মোট ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৮ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পেছেনে শুধুই যে করোনা মহামারী দায়ি বিষয় এমন নয়।বাংলাদেশ সহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ গুলোর মধ্যে দেখা যায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেমন, পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, অভিভাবকের অসচেতনতা, শিক্ষা শেষে হতাশা, বাল্য বিবাহ প্রভৃতি।
সরকারি জরীপ যাই বলুক না কেন এখনো এদেশের উল্লেখযোগ্য্য সংখ্যক পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেক দরিদ্র্য পরিবারে বাবা মারা গেছে কিংবা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছে।বিবিসি নিউস এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে,শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে অতিমাত্রায় শিক্ষাব্যয়কে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সমাজের দরিদ্র ব্যক্তিটিও চান, তার সন্তান লেখাপড়া করুক। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে দেশে যে ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে; নোট-গাইড আর প্রাইভেট-কোচিংয়ের যে দৌরাত্ম্য চলছে- কম আয়সম্পন্ন পরিবারগুলো এ ‘ধাক্কা’ সামলাতে পারছে না বলেই ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটছে।অবশ্য এক্ষেত্রে আর্থিক অসঙ্গতি যেমন দায়ী, তেমনি বাল্যবিয়ে ও কুসংস্কারসহ নানা ধরনের সমস্যাও রয়েছে। আইনগত বিধিনিষেধ থাকার পরও দেশে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে; না হলে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা একদিন দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রসঙ্গে উম্মে নাহার নির্বাহী পরিচালক, উদ্যোগ, দিনাজপুর প্রথম আলো কে জানান, ২০১৯ সাল থেকে আমরা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কাজ করছি। আমরা বাবা ও মায়েদের বোঝা। এটা নিয়ে বিতর্ক করি। বাল্যবিবাহ রোধে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করেছি। কিন্তু কোভিড এসে অনেক ক্ষতি করেছে। প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল। মেয়েরা এ সময় বাড়িতে ছিল। মা–বাবা সর্বক্ষণ তাদের দেখেছে। ঘটক এসে অভিভাবককে উসকে দিয়েছে। এ জন্য কোভিডের সময় অনেক বাল্যবিবাহ হয়েছে।
আমরা ৫৬টি বিবাহিত মেয়েকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এর মধ্যে ৪০ জন এসএসসি পাস করেছে। ৬৪ জন অবিবাহিত মেয়েকে স্কুলে এনেছি। সহজে এ কাজ করতে পারিনি। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যারা এসএসসি পাস করেছে।তিনি আরও বলেন,আমাদের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যারা পথে থাকে বা ছিন্নমূল, তাদের জন্মনিবন্ধন অনেক বড় সমস্যা। ভাসমান জন্মনিবন্ধনের জন্য যে তথ্য লাগে, সেটা তাদের নেই। ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য সরকারের দিক থেকে এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যেন তারা জন্মনিবন্ধনের আওতায় আসতে পারে।জন্মনিবন্ধন না থাকার জন্য তারা স্কুলে ভর্তির সময় বাধাগ্রস্ত হয়। আমরা যখন স্কুলে যাওয়ার কথা বলছি, সেখানে কিছু মানুষ প্রথমেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। পরবর্তী সময়ে বিয়েসহ সব ধরনের কাজের জন্য তাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও কথাবার্তা কম হয়নি; যার অধিকাংশই শিক্ষাক্ষেত্রে নানা অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, দুর্নীতি ও মাধ্যমিকসহ অন্যান্য পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া অন্যতম কারণ। এছাড়াও বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ দারিদ্র্য এই দেশের প্রধান সমসা গুলো একটি। দারিদ্র্য দূর করা না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বপ্ন সুদূরপরাহত থেকে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের উপর জোর প্রদান করতে হবে।সেই সাথে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করার জন্য স্থানীয় জনসমাজ, সরকার সর্বপোরি সুশীল সমাজের ম্পৃক্ততা অতীব জরুরি। সরকার ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগে জনসচেতনা বৃদ্ধিকরণসহ প্রত্যন্তঅঞ্চলে স্কুলপ্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা, বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি অব্যহত রাখা, মিড-ডে মিলবাস্তবায়নকরা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা,শিক্ষাউপকরণ গুলো সহজলভ্য করা সেই সাথে শিক্ষাবান্ধব প্ররিবেশ তৈরি করতে হবে।
সরকার, সুশীল সমাজ পাশাপাশি জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগে শিক্ষার্থী নামক ফুলগুলো বুদ্ধিদীপ্ত এবং আলোকিত মানুষ হওয়ার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এখানেই শেষ করছি।
ভাবনায়- সুমাইয়া সাথি
লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়