মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা ::
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ড্যাব নেতা অর্থপেডিকস সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামানসহ আটজন অধ্যাপক ও সহকারি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ রুহুল কুদ্দুছ বুধবার ঢাকায় চলে যান আর ফেরেন রবিবার। অভিযোগ ডাঃ কামরুজ্জামান কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ রুহুল কুদ্দুছের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে তার উপর প্রভাব খাটিয়ে এ অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এ কারণে অন্যরাও সুযোগ নিচ্ছেন। ভোগান্তিতে চিকিৎসা সেবা গ্রহীতারা।
চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ডাঃ কামরুজ্জামানই নন, ফিজিওলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ জাহিদ হাসান খান (আসেন না), কমিউনিটি মেডিসিনের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ সামসুদা বেগম (অনিয়মিত), সার্জারী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোঃ আতিকুল ইসলাম (আসেন না), অর্থপেডিক সার্জারী বিভাগের ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামান (সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন), চক্ষু বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আলমগীর কবীর (অনিয়মিত), নিওরোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আলীম (সপ্তাহে এক দিন), ইউরোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক (সপ্তাহে দুই দিন) ও বায়ো কেমিষ্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সুনীল কৃষ্ণ বল (সপ্তাহে দুই দিন) নিয়মিত রোগী দেখেন না। ফলে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারি (বড় বাবু) স্বদেশ রায় সাংবাদিকদের বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন ৩২ জন। এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কোভিডের দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে সাতজন সহকারি সার্জন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ইএমও হিসেবে পাঁচজন, আইমএও হিসেবে দুইজন ও এনেসথেসিষ্ট হিসেবে একজন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পূরণে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার জানা নেই। এ ছাড়া ১৬৫ জন স্টাফ নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৩৫ জন। চারজন নার্সিং সুপার ভাইজার রয়েছে। তবে ১০৬ জন স্টাফ নার্স নতুন করে যোগদান করার কথা রয়েছে।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সেখানে প্রভাষক, সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক হিসেবে বর্তমানে ৫৩ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত। গত এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ঘুরে বিভিন্ন রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অর্থপেডিকস সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামানের বহিঃবিভাগে ১৩২ নং কক্ষে সাইন বোর্ড টাঙানো থাকলেও তাকে পাওয়া যায় না।
ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক মোস্তাকিম হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহে তিনি চার দিন স্লিপ করেও ডাঃ কামরুজ্জামানের দেখা পাননি। জানতে চাইলে ওই কক্ষে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীরা জানিয়েছেন যে স্যার কলেজের বিশেষ প্রোগ্রাম ছাড়া আসেন না। তাই তার জন্য সময় নষ্ট না করে অন্য ডাক্তার দিয়ে কাজ সেরে নিন। একই কথা বলেন কালিগঞ্জের সাইমুন হোসেন, সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের নাজমা খাতুনসহ কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসক জানান, অর্থপেডিকস সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তারই ছাত্র ডাঃ রুহুল কুদ্দুস দায়িত্ব পালন করায় তিনি বর্তমান সময়েও ইচ্ছামত যাওয়া আসা করেন। সেই সূযোগটাকে কাজে লাগিয়েছেন আরো সাতজন শিক্ষক ডাক্তার।
তারা আরো জানান, মেডিকেল কলেজ থেকে হাসপাতালে সেবা দিতে আসা অনেক চিকিৎসকই নিয়ম অনুযায়ি কর্তব্য না করায় তাদেরকে জনগনের কাছে হেনস্থা হতে হয়। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অনেকে ক্ষেত্র বিশেষ মারমুখি হয়। তাই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত সকল চিকিৎসককে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ রুহুল কুদ্দুস অনুপস্থিত থাকায় মুঠোফোনে নিজের দায়িত্ব অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, অনেকেই অভিযোগ করতে পারে। একজন অধ্যাপক আনা বা রাখা সহজ কথা নয়। এ নিয়ে বেশি লেখালেখি করলে কামরুজ্জামানসহ অনেকেই সাতক্ষীরা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন বলে তিনি মনে করেন। তবে তিনি মেডিকেল কলেজে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি কথা বলার জন্য আহবান জানান।