ডায়াবেটিস হচ্ছে বর্তমান সময়ের অন্যতম লাইফস্টাইল ডিজিজ। আমেরিকায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতি ৯ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতি ৩ জনে একজন প্রি-ডায়াবেটিক। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের প্রতি ৩ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশেও এ রোগের প্রকোপ হু হু করে বাড়ছে। এদেশে প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। বিশ্বজুড়েই বিস্তৃত হয়েছে এর করাল থাবা। তাই ডায়াবেটিসকে এখন বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর প্লেগ। ওষুধ না খেয়েও কীভাবে ডায়াবেটিস দূরে রাখা যায় সেটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো। ডায়াবেটিস কী? প্রতিটি বাহনের জন্যে প্রয়োজন জ্বালানি, যেমন : ডিজেল পেট্রোল অকটেন ইত্যাদি। শরীররূপী আমাদের এই বাহনেরও জ্বালানি প্রয়োজন। শরীরের মূল জ্বালানি হচ্ছে গ্লুকোজ। আমাদের শরীরের যত ধরনের কাজ আছে—নড়াচড়া হাঁটা দৌড়ানো চিন্তা করাসহ সকল ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয় গ্লুকোজ। শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের পর হজমশেষে গ্লুকোজ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করে। ইনসুলিনের সাহায্যে গ্লুকোজ রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করে এবং বিপাকক্রিয়ায় অংশ নিয়ে শক্তি তৈরি করে। কোনো কারণে রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যায়। একপর্যায়ে এই বাড়তি গ্লুকোজ কিডনি প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিন্তু কোষের মধ্যে গ্লুকোজ স্বল্পতা, আর প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি—এই অবস্থার নামই ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ বার বার ক্ষুধা লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অবসন্নতা, ওজন কমে যাওয়া, অপুষ্টি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ঘটনাচক্রে অর্থাৎ অন্য কোনো রোগের চিকিৎসায় পরীক্ষা-নিরীক্ষাকালে। ডায়াবেটিস নির্ণয় করার উপায় জেনে অবাক হবেন, আমাদের রক্তে যে পরিমাণ সুগার বা চিনি থাকে তার পরিমাণ মাত্র এক চা চামচ। আমরা যদি প্রতিদিন চা/ কফি/ কোমল পানীয়/ মিষ্টান্ন/ অন্য কোনো খাবারের সাথে ২/ ৩/ ৪/ ৫ চা চামচ চিনি খাই, তখন রক্তের সুগার বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণÑযা স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ।খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে ওজন কমানো: জার্মান ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসর স্টেফান মার্টিন জানান, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস শতকরা ৯০ ভাগ কমানো সম্ভব, যদি সে রোগীর ডায়াবেটিসে ভোগার সময়কাল চার বছরের কম হয়ে থাকে। নুডলস এড়িয়ে চলুন: নুডলস বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের শর্করা রক্তে চিনির মাত্রা মুহূর্তের মধ্যে বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শরীরের কোষে ইনসুলিন হরমোন ছড়িয়ে পড়ে৷ এ কারণে ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে নুডলস এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন ৬০০ ক্যালোরি: ২০০ ডায়াবেটিস রোগী নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীরা কড়া ডায়াটিং করে, অর্থাৎ দিনে মাত্র ৬০০ ক্যলোরি প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ওষুধ সেবন বন্ধ করতে পেরেছেন। তাছাড়া দীর্ঘ তিন মাস শর্করাজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধু প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়েও একই ফল পাওয়া গেছে। তিন বেলা প্রোটিন: তিন সপ্তাহ ধরে তিন বেলা প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে অবশ্যই রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাবে বলে জানান বিশেষজ্ঞ স্টেফান মার্টিন। মাছ, মুরগি, ডিম, মটরশুটি এবং দুধজাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। খেতে পারেন বাদাম: ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন একমুঠো বাদাম, আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কারণ, বাদামের ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখে। সবজি ও বিভিন্ন সালাদ পাতা: সবজি ও বিভিন্ন সালাদ পাতায় ক্যালোরি নাই বললেই চলে। তবে এতে থাকা পানি পেট ভরায় এবং খুব ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে। সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিলে অনেকক্ষণ খিদেও পায় না। তাই প্রচুর সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। স্ট্রবেরি, আপেল: এসব ফলে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক কম শর্করা রয়েছে। কাজেই ওজন কমাতে এবং ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনো চিন্তা না করে এ ধরনের ফল যত খুশি খাওয়া যায়। বাইরের কেনা খাবার একেবারেই বাদ রাখুন: ডায়াসবেটিস রোগীর এক প্লেট খাবারের অর্ধেকটাই হতে হবে সালাদ বা সবজি। আর বাকি অর্ধেকে চার ভাগের তিন ভাগ প্রোটিনযুক্ত খাবার আর এক ভাগ থাকতে পারে শর্করাজাতীয় খাবার। বাইরের কেনা খাবার একেবারেই বাদ রাখুন৷ এই নিয়মগুলো মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব সহজ হবে।