রাকিব হোসেন, ঢাকাঃ রাজধানীর পুরান ঢাকার কাউন্সিলর আবু সাইদের সহায়তায় পৈত্রিক বাড়ি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি করেছেন বংশালের মালিটোলা এলাকা পাপিয়া সুলতানা টুম্পা ও তার পরিবার।
পাপিয়ার ভাষ্য, তার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা কাউন্সিলর আবু সাইদের সহায়তায় তাদের বাড়ি দখল করেছে। দখল হয়ে যাওয়া বাড়িতে নিরাপদে বসবাস, সন্ত্রাসীদের হামলা ও হুমকি থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ ও দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবারটি।
সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়া সুলতানা টুম্পা লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার বাবা আফজাল হোসেন নান্টু মোল্লা ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন বেগম। বড় বোন সাজিয়া সুলতানা বিনু, বড় ভাই তুহিন হোসেন, ছোট ভাই পারভেজ আহমেদ রাজু ও আমি তার গর্ভের সন্তান।
বাবার প্রথম স্ত্রী শাকিলা বেগম (মৃত)। তার গর্ভে জন্ম নেন আমার সৎ ভাই সমসের সালাউদ্দিন হারুন, বোন বিলকিস সুলতানা মিনু। আমার বাবা তাদের ওয়ারিশ রেখে গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর মাসহ আমরা চার ভাই-বোন মালিটোলার বাসায় বসবাস করে আসছি। মৃত্যুর আগে বাবা ১০-১৫টি বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যাংকে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা রেখে যান।
বাবার মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা আমার চাচা মোহাম্মদ আলী ময়নাকে সঙ্গে নিয়ে আমার মা পারভীন বেগমকে মারধর করে গুরুত্বর আহত করেন। তারা বাবার নামে থাকা সম্পত্তির কাগজপত্র, মায়ের কাবিননামা ও ব্যাংকিং কাগজপত্র আলমারি ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতে বিচার চাইলেও কোনো সুরাহা পাইনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরনা ধরেও কোনো সমাধান হয়নি।
পাপিয়া আরও বলেন, আমাদের বাড়িগুলো থেকে প্রতিমাসে ৩০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। ওই টাকা থেকে বাবার ম্যানেজার গোলাপ মিয়া আমাদের পরিবারকে সংসার চালানো বাবদ কিছু টাকা দেন। ওই টাকায় আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা চাচা ও সৎ ভাইবোনদের ওয়ারিশের অংশ ভাগ করে দিতে বললেও তারা নানা টালবাহানা দেখাতে শুরু করে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন পাপিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ব্যাংকে রেখে যাওয়া তাদের বাবার টাকার জন্য তাদের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এতে তাদের বৈধ ওয়ারিশ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। কিন্তু তাদের চাচা আফজাল হোসেন নান্টু মোল্লা ওয়ারিশ অস্বীকার করেন। আমাদের ওয়ারিশ না দিয়ে এলাকার ৯০ ও ৯৫ নম্বর বাড়ি দখলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু সাঈদকে একটি অফিস করে দেন। অফিসটি ৯০ নম্বর বাড়ির তিনতলায় অবস্থিত।২০২০ সালের ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ২০-২৫ জন লোক আমাদের বাড়িতে অবৈধভাবে ঢুকে পড়ে। তারা আমাদের বাড়ির গেট ও গ্রিল ভেঙে ফেলে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে তলপেটে লাথি মারে। বাড়ির দোতলা থেকে আমকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আমার দুই ভাইকে অস্ত্র দেখিয়ে গুলি করে পেটের নাড়ি-ভুড়ি বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমার ভাই তুহিনকে রড দিয়ে আঘাত করে। আমার ভাবিকে মের কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়।
সর্বশেষ গত ৩১ মে বিকেলে চাচা ময়না নিজের ছেলে ও তার সহযোগীদের নিয়ে আমার ওপর হামলা করেন। এতে আমার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা আমার ডান হাতও ভেঙে দিয়েছে। আমার বা-হাতে ভাঙা কাঁচ ঢুকিয়ে দিয়েছে। এলোপাতাড়ি মারধর করে আমার মাড়ির দাঁত তুলে ফেলেছে।
এ বিষয়ে বংশাল থানায় অভিযোগ করতে গেলে মামলা না দিয়ে আমাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আমি আদালতে মামলা করি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মোহাম্মদ আলী ময়না আগে থেকেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত। বাবার সম্পত্তির বৈধ ওয়ারিশ হয়েও আমাদের সৎ ভাই-বোন, চাচা ও এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে আমরা বৈধ অধিকার আদায় করতে পারছি না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এসব অভিযোগ নিয়ে এর আগেও পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চায়েত ও আদালতে ভুক্তভোগী পরিবারের করা মামলার কপি সংবাদকমীদের হাতে রয়েছে। এসব ব্যাপারে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।