সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছে বানভাসিদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত হয়ে পড়া ঘর-বাড়ি ও নৌকায় অবস্থান করা মানুষজন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন তারা। বন্যা কবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠেছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও।
এদিক সরকারী-বসরকারী ভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জেলার বেসরকারি সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য মতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়ালেও জেলা প্রশাসনে তথ্য মতে ৪৯ টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫ টি মেডিকেল টিম, ৯ টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও ১৭ টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি। সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের ধারুহেরা গ্রামের খুটু মিয়া বলেন আমি অন্য পুকুরে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। এ ছাড়াও কয়েকটি পুকুরে মাছ ছাড়ছি বন্যার পানিতে তলিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের কাজিয়াল বলেন, বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় গবাদি পশু গুলোকে নিয়ে উঁচু সড়ক এসেছি। আমাদের সাথে সাথে গরু গুলো খুব কষ্ট। এখন রাস্তায় থাকা লাগবে বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে তারপর বাড়ি যাবো।
সদর উপজেলার ভগবতীপুর চরের জোহরা খাতুন জানান, চুলা জ্বালাত পারছি না। ঘরেরেও সবকিছু তলিয়ে আছে । ছেলে মেয়ে- নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় নিজেরা তো কষ্টে আছি। এ অবস্থায় গরু ছাগলের খাবারও জোগাড় করতে পারছি না। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,;;; নাগেশ্বরী উপজেলাতে বেরিবাদের ৫০ মিটার আউট হয়ে গেছে. । এছাড়াও দুধকুমার নদীর কালিগঞ্জ ,বামন ডাঙ্গা, ধাউরারকুটি এলাকায় বাধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে।বন্যার পানি আরো তিন দিন বাড়তি থাকবে। এরপর কমে নিম্নগামী হবে। বানভাসীদের মধ্যে সরকারি সহায়তা ছাড়াও মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি উদ্যোগে শুকনো খাবার ও বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের বার্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে । বন্যার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।