এস এম সোহেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গাইবান্ধায় উচ্ছ্বাস-আনন্দ আর ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল আজহার নামাজ। ঈদগাহ মাঠ গুলো ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ অতি তাপদাহের মধ্যে ঈদের জামাত শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলিতে মেতে উঠেন। দীর্ঘদিন পরে ঈদগাহে জামাতে শরীক হতে পেরে এক বাড়তি আনন্দ ছিল ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মধ্যে। আজ ১০ জুলাই রবিবার সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার প্রধান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে (শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টোডিয়াম সংলগ্ন) অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান, পৌরসভার মেয়র মো. মতলুবর রহমানসহ কয়েক হাজার মুসল্লি। এরপর সকাল পৌনে ৯টায় সেখানে ঈদের দ্বিতীয় জামাত হয়।
এছাড়া সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে পুলিশ লাইন ময়দানে ঈদের জামাতে নামাজে অংশ নেন জেলা পুলিশ সুপার সহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তাগণ ও স্থানীয়রা, জেলা শহরের এনএইচ মর্ডাণ হাইস্কুল মাঠ, রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদ, ডেভিট কোম্পানী পাড়া জামে মসজিদ, ফকিরপাড়া জামে মসজিদ, খানকাহ শরীফ মাদ্রাসা মসজিদ ও গাইবান্ধা সরকারী কলেজ জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ এবং ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার জেলাজুড়ে মোট ১ হাজার ১৬২টি ঈদগাহ মাঠে ঈদুল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩২০টি ঈদগাহে ঈদের জামাত হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া সবচেয়ে কম ফুলছড়ি উপজেলার ৩৮টি ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসল্লিরা যাতে প্রতিটি ঈদগাহ মাঠে সুষ্ঠভাবে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
জেলার চারটি পৌরসভা ও সাতটি উপজেলা মিলে তলিকাভুক্ত ১ হাজার ১৬২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১১২টি, পলাশবাড়ী উপজেলায় ২৩৬টি, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১৮০টি, সাঘাটা উপজেলায় ৭৬টি, ফুলছড়ি উপজেলায় ৩৮টি, সাদুল্লাপুর উপজেলায় ২০০টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৩২০টি ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ঈদগাহে সুষ্ঠভাবে নামাজ সম্পুর্ন করতে ছিল আইন শৃংঙ্খলা বাহিনির বাড়তি নজরদারি। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারাবিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন স্ব স্ব মাঠের ঈমামগণ।
বিশ্বের একমাত্র শান্তির ঠিকানা ইসলাম ধর্মমতে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর ছেলে হযরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা। ঈদের দিন ও পর দুই দিন পর্যন্ত (১১ ও ১২ জিলহজ্ব) পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। কোরবানি দেওয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। সাধারণত উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এসব পশুই কোরবানি করার বিধান রয়েছে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য। এই ঈদে পশু কোরবানিই প্রধান ইবাদত। ঈদের জামাত আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন কোরবানির জন্য।
এদিকে এবার ঈদের আনন্দ যেন বিষাদে রূপ না নেয়- সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের অভিমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। নিজে ও অপরকে সুস্থ্য রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিরোধীদলীয় নেতা,জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ, বিএনপি মহাসচিব ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত ও বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।