মীর এম এম শামীমঃপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন’র সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে সারা দেশ জুড়ে যারা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন তারা হয়তো জানেনই না এই মানুষটি শুধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী- ই নন, ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন বিদগ্ধ শিক্ষক, বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ ও সুনামধন্য কূটনীতিক।
সিলেটের সুপরিচিত, সম্ভ্রান্ত এবং সুশিক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠার কারনে তিনি মননে যেমন রুচিশীল তেমনি মার্জিত, সদালাপী ও সহজ সরল মানবিক একজন মানুষ। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে দেশকে সম্মানিত করেছেন।
তিনি রাষ্ট্রের কোন কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে যখন কোন কথা বলেন ধরে নিতে হবে তিনি রাষ্ট্র বা দলের ক্ষতি হোক তা তিনি নিশ্চয়ই বলতে পারেন না। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রিয় জন্মভূমি শুধুমাত্র দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয় নাই বারংবার বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। আজ একথা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সমন্বিত ভাবে লিপ্ত ছিলো। তাদের যৌথ ষড়যন্ত্রের নীলনকশার মঞ্চায়ন হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট। যা ছিলো বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
তাহলে পাশ্ববর্তী দেশের একজন মূখ্যমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ড. মোমেনের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান এজন্য যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থানের কারনে সে অঞ্চলের মানুষেরা শান্তিতে বসবাস করতে পারছে। এর প্রতিত্তোরে তিনি বলেন “আমরা শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে আপনাদের সাহায্য চাই”। এর মানে কি এই যে, তিনি হাসিনা সরকারকে পূণরায় ক্ষমতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন? নিশ্চয়ই না বরং তিনি বুঝাতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক শত্রুদের দ্বারা বাংলাদেশের স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা যেন বিনষ্ট না হয়, সেজন্য যেন তারা সহযোগিতা করেন, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশে রক্ষা করতে যেন প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আমাদের পাশে থাকে। একজন সফল কূটনীতিক নিশ্চয়ই তার দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশি দেশের সহযোগিতা চাইতেই পারেন এবং সেটাই স্বাভাবিক। অথচ তাঁর এই সরল বক্তব্যকে বিক্রিত করে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে তাকে যে ভাবে সমালোচিত করা হচ্ছে তাতে করে সত্যিকারের একজন মেধাবী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক মনকষ্ট ভুগবেন এটাই স্বাভাবিক। আর এজন্যই তিনি বলেছেন, “মিডিয়ার স্বাধীনতার নামে বানিয়ে সংবাদ প্রচার করলে খারাপ লাগে”।
আবার কেউ কেউ বলছেন তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেউ নন। অথচ তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় নিয়ে সিলেট-০১ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সম্মানিত সদস্য। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু কন্যার সম্মতি সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসাবে দেশ ও বিদেশে দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শ প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বিরোধী পক্ষের কেউ কেউ তো তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী তকমা দিয়ে তাঁর বিচারের দাবি করছেন। মনে রাখা দরকার বানিয়ে বানিয়ে সংবাদ প্রচার করে একজন দেশপ্রেমিক গুনি মানুষকে হয়তো সাময়িক ভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালানো যেতে পারে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেশ ও দেশের মানুষই গুনির সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। ক্ষতি হয় দেশ ও জাতির।