মোঃ মহিউদ্দিন,ভোলা সদরঃ—- ডাঃ আবদুল মান্নান ভোলা থানার কালিকানগর গ্রামে ১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৯৪১ইং সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।
ষাটের দশকের পর ভোলা শহরের নাগরিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে যাদের অবদান রয়েছে, ডাঃ আবদুল মান্নান তাদের একজন। কারো বিপদ-আপদ, বিচার আচার, স্কুল-মাদ্রাসার সংকট, অন্যায় অবরোধ, জনহিতকর কাজের চর্চা- এ ধরনের ‘স্টান্ডবাই’ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি । তিনি কোন এমপি বা মিনিস্টার পদ মর্যাদার লোক ছিলেন না, কিন্তু শহরের বহু কাজের কাজী ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন একজন জেলা শহরের ডাক্তার, কিন্তু তাঁর চিকিৎসা অভিজ্ঞান বহু বড় বড় ডাক্তারদের হার মানিয়েছে। তিনি মুখে হাসি ফুটিয়েছেন বহু মরণাপন্ন রোগীর। । পাস করার পর ২ বছর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্কুলের চাকুরী ছেড়ে, তৎকালীন ২৫০ বেডের অস্থায়ী অকজিলিয়ারী হাসপাতালে ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ননমেডিক্যাল স্টোরকিপার হিসাবে চাকুরী করেন। এ সময় ৫ বছর ডাঃ গোপাল মল্লিক নামক জনৈক অভিজ্ঞ মেডিক্যাল অফিসারের নিকট অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এরপর ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকুরী করেন তারপর থেকে ভোলা শহরে একজন নন মেডিকেল চিকিৎসক হিসেবে পেশা আরম্ভ এবং ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।
১৯৫৫ সালে ভোলা পৌরসভার মুসলমানদের ভোটাধিকার লাভের জন্য মরহুম আলতাজের রহমান তালুকদারের (বড় মিয়া) পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দোলন করেন এবং মামলা করেন। ফলে এ সময় মুসলমানদের ভোটাধিকার বৃদ্ধি পায়। এতে ১৯৫৫ সালে মরহুম সোলায়মান মোল্লা প্রথম মুসলিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন । ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ( ২০ বছর) ডাঃ মান্নান পৌর কমিশনার ছিলেন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচন করবেন না বলে নির্বাচনের ৭ দিন পূর্বে বরিশাল চলে গেলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে জনগণ তাঁকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করেন। এটাই পৌরসভায় তাঁর শেষ নির্বাচন। ১৯৫৫ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন সময়ে ভোলা দারুল হাদীস আলিয়া মাদ্রাসায় গভর্নিং বডির মেম্বার- সেক্রেটারী ও সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। ভোলা টাউন কমিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল এবং ১৯৭৫ সাল থেকে আমৃত্যু সহ-সভাপতি হিসাবে কর্তব্যরত ছিলেন। ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীতে ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সদস্য, সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ভোলা মহকুমা
মৎস্যজীবি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তা পরিচালনা করেন। . ১৯৭২ সালে ভোলা কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যা ও = জলোচ্ছ্বাসে ভোলার জেলেদের সীমাহীন ক্ষতি হলে জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য
বিদেশী অর্থানুকূল্যে বাংলাদেশ সরকারের সমবায় বিভাগ যে ১১০০ নৌকা বিতরণ করেন ডাঃ মান্নান তন্মধ্যে তদবির করে । ৬৬৫টি নৌকা ভোলার জেলেদের মধ্যে বিতরণ করেন। কেন্দ্রীয় সমিতির নামে কতিপয় নৌকা-নির্মাণ ঠিকাদারী কাজ করে ১.১৬ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেন। তদ্বারা জেলেদের ধৃত মৎস্য বাজারজাত করার লক্ষ্যে ৫টি মৎস্য পরিবহন লঞ্চ, ২টি বরফকল নির্মাণ করেন। নৌকা নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ডকইয়ার্ড করার লক্ষ্যে ভোলা খেয়াঘাটের নিকটে ৩ একর জমি সংগ্রহ করেন ।
তিনি সকল সময় অন্যায়, ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ৮ বছর যাবত তিনি ভোলা খলিফাপট্টি ফেরদাউস জামে মসজিদের সেক্রেটারী পদে থেকে মসজিদ ও মসজিদ মার্কেট নির্মাণে ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন।
তিনি ওমরাও এতেকাফ করার জন্য মক্কা শরীফে গিয়েছিলেন সেখান থেকে বাসায় আসেন এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন তার দুই পুত্র ও কন্যা রয়েছে তিন কন্যা রয়েছে সকলেই সমাজের সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ তিনি ১২-৯-২০০১ তারিখে পিজি হাসপাতালে ৮৫ বছর বয়সে ভোর ৬ টার সময় ইন্তেকাল করেন। তাকে ভোলা দারুল হাদিস আলিয়া মাদ্রাসার কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
সূত্র ঃ পলি মাটির দেশ ভোলা, ভোলা জেলার ইতিহাস।