নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ড. মশিউর মালেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি জাতির পক্ষে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীলঙ্কা সফরকালে পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানী খারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলাপকালে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের আবেদন জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মহোদয় একাত্তরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানকে আগে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। এটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আদর্শিক দৃঢ়তা,দেশপ্রেম এবং দেশ ও দায়িত্বের প্রতি দায়াবদ্ধতার প্রমাণ। উল্লেক্ষ্য ১৯৭১ সনের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদ ও প্রায় তিন লাখ সম্ভ্রম যোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাকিস্তানী পরাধীনতা থেকে বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে দেশ হানাদার মুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জন করে।
জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে ভূট্টো যখন বাংলাদেশে আসেন তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ, বিহারীদের সে দেশে ফিরিয়ে নেয়া এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদার বাহিনী দেশে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তা সহ যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছিল তার বিচার ও ক্ষতিপূরণের কথা তুলে ধরেছিলেন।সে সময় পাকিস্তান পক্ষ বিহারীদের ফিরিয়ে নেয়া সহ যুদ্ধাপরাধী ১৯০ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকির্তাদের বিচারের ওয়াদা করেন। এসব থেকে দায়মুক্তির জন্য পাকিস্তান এবং তাদের আন্তর্জাতিক দোসরদের ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করিয়ে পাকিস্তানের বশংবদ মোশতাক-জিয়াকে ক্ষমতা নিয়ে আসে। এর পরে পাকিস্তানের ভাবধারায় দেশ চলতে থাকে।এ সময়ের জিয়া-এরশাদ-খালেদা সরকার সমূহ পাকিস্তানের সাথে অমীমাংসিত বিষয়সমূহ নিয়ে আর কেউ কোন কথা বলেনি। ১৯৯৬ এ ২১ বছর পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানের সাথে দেনা-পাওনা ও বিহারীদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে।ফলে পূনরায় ষড়যন্ত্র করে সর্বকালের সুশাসনের জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে সুখ্যাতি অর্জনকারী শেখ হাসিনার সরকার বা আওয়ামীলীগ যাতে ভবিষ্যতে আর পাকিস্তানের সাথে দেনা- পাওনার বিষয়টি তুলতে না পারে সে জন্যে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী দলটিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার মিশনে নামে পাকিস্তান এবং তাদের এজেন্টরা। সেই মিশনের অংশ হিসেবে ২০০১ এর নির্বাচনে দেশে বিএনপি কে জেতানোর জন্য ৫০ কোটি রুপি দিয়ে সহায়তা করে(পাকিস্তানী গোয়েন্দা আইএসআই যা পরে স্বীকার করেছে) এবং নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসায়।এর পরেই তারা শুরু করে আওয়ামীলীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার আসল মিশন। এ সময় তারা বিএনপির প্রশ্রয়ে তাদের প্রত্যক্ষ মদদ নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী জঙ্গিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি নিধনের মহাজজ্ঞে মেতে ওঠে।এ জজ্ঞে মঞ্জুরুল ইমাম, মুহরি,মমতাজ উদ্দিন, আহসানউল্লাহ মাস্টার সহ জাতির মেধাবী সন্তান শাহ এম এস কিবরিয়া দের মত খ্যাতিমান নেতাসহ অসংখ্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের হত্যা করে,সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয় ধ্বংস করে এবং চুড়ান্তভাবে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী কেন্দ্রীয় নেতাদের সমূলে নিধন প্রচেষ্টা চালায়।
২০০৯ এ শেখ হাসিনার সরকার অন্ধকার দু:শাসনের অবসান ঘটিয়ে পূনরায় ক্ষমতায় এলে জঙ্গীদের ব্যাপারে শূন্য সহনশীলতা নীতির মাধমে জঙ্গীবাদের বিনাশ ঘটিয়ে দেশকে অন্ধকারের যুগ থেকে সম্মানের আলোকময় উজ্জলতায় ফিরিয়ে এনেছে। দেশের উন্নয়ন আজ বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে।পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আজ বাংলাদেশকে অনুকরণীয় দেশ হিসেবে মনে করে এবং তারা সরকারকে চাপ দিচ্ছে যেন সে দেশের উন্নয়নের জন্য তাদের সরকার বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সরকারকে অনুসরণ করে।
উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সেদেশের একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। এহেন বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন পরিবার দেশবাসীর পক্ষে তাঁকে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়।