সুজন আলী,রাণীশংকৈল প্রতিনিধিঃ বাবা আনোয়ার হোসেন করেন কখনো মিল চাতালের কাজ আবার কখনো চালান ভ্যান মা নাজমা বেগম করেন সাথী হিমাগারের শ্রমিকদের ভাত রান্নার কাজ কখনো মিল চাতালে ছেলে পরীক্ষার আগে ও পড়াশোনার খরচ জোগাতে কখনো ভ্যান চালিয়েছেন আবার কখনো ইট ভাটার ট্রলির শ্রমিকের কাজ পরিক্ষার রেজাল্ট হওয়ার আগের দিনেও সে ট্রলির শ্রমিকের কাজ করেছেনথাকেন একটি জরাজিন্য খড়ের ঘরে।কিন্তু কে জানতো এই ছেলে টিই পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। এখনো সেই ছাত্র হেলপার হিসেবেই কাজ করেন আসছেন স্থানীয় একটি ইট ভাটার ট্রলিতে।সে প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে যেতে না পারলেও দিনে বেলায় ইটভাটার ট্রলিতে হেলপারে কাজ করেছনে রাতের বেলায় চালিয়েছেন পড়াশোনা। অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কখনোই দমে যাননি রাজু হোসেন। পেয়েছেন সফলতার রেজাল্ট। এ বছর মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫।
বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধ্যারই খুটিয়াটুলি গ্রামের ভ্যান চালক আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে রাজু হোসেনের কথা।
দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সে। বাড়ির পাশে মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.২২ ও ২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে রাজু হোসেন।
অতি কষ্টের মাঝেও এমন ফলাফলে নতুন স্বপ্ন দেখছে আইন বিভাগে পড়াশোনা করার।রাজুর সাথে কথা বলে জানা যায় সে আইনজীবী হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে চান কোন স্বার্থ ছাড়ায়।কথা গুলো বলতে বলতে দু চোখ দিয়ে যেন গড়িয়ে পড়ছিল তার চোখের পানি।অন্য দিকে বাবা মা ও ধরে রাখতে পারেনি চোখের পানি হাউমাউ করে কেদে ফেলেছেন রাজু সহ বাবা মা।এ চোখের পানি যেন দেখছে এক নতুন স্বপ্ন। আর এই নতুন স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে আর্থিক অভাব অনোটন।রাজু বলেন বেসরকারি এনজিও আর ডি আর এস থেকে টাকা উত্তোলন করে রংপুরের একটি কোচিং সেন্টার ভর্তি পরিক্ষার জন্য কিছু টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েও খাওয়া দাওয়ার খরচ আর মিটানো সম্ভব না হওয়ায় সেখানেও কোচিং-এ যাওয়া হয়নি রাজুর।
তবে তার এই ফলাফলে খুশি পরিবার ও আশপাশের স্থানীয়রা। পরিবার সহ স্থানীয়দের দাবি রাজু যদি কোন বৃত্তবান বা সরকারের সহযোগিতা পান তবে সে পড়াশোনা করে একদিন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। জানতে চাইলে রাজুর মা নাজমা বেগম বলেন,দুই ছেলে নিয়ে বহু কষ্টে জীবন চালিয়েছি।অর্থের অভাবে এক ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে আর বড় ছেলে অতি কস্টে হারভাংঙ্গা পরিশ্রম করে পড়াশোনা চালয়ে যাচ্ছে এখনো।তবে তার ভালো ফলাফলে আমরা অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু মাথায় যেন পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে ভালো ফলাফল পেয়ে যদি এখন ছেলেকে টাকার অভাবে আর পড়ালেখা না করাতে পারি তবে এ দু:খ কাকে বলবো।
রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি সফিকুর ইসলাম আলম বলেন, তার জীবনটা একটা সংগ্রাম। অনেক কষ্ট করে সে কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তার এই প্রতিভ কাজে লাগিয়ে সে আমাদের কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন এটা আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয় আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।তবে এইসব গরিব অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমাদের এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা জরুরী।
জানতে চাইলে নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান,আমি আগে জানতাম না তবে জেনে অনেক খুশি হলাম।আমি আমার পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সাধ্যমত সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ।
রানীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান শাহারিয়ার আজম মুন্না বলেন,তার রেজাল্ট শুনে অনেক খুশি হলাম,আমি তার আগামীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।তার মতো মেধাবী ছাত্রদের পরিষদের পক্ষ থেকে তার সহযোগিতা থাকবে ইনশাআল্লাহ।তবে এলাকার সার্মথ্য বানদের এগিয়ে আসার আহব্বান।