মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আদি যমুনা নদী খনন কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নদী দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি সুউচ্চ তিন তলা ভবন শনিবার (১০ জুন) দুপুরের পর প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বুলডোজার ও এস্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করে ভাঙার কাজ শুরু করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। রোববার (১১ জুন) সকালে ফের ওই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গড়ে তোলা নীলকমল নামীয় তিন তলা ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে সর্বত্র হৈচৈ পড়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মলয় কুমার গায়েন ঝন্টুর মালিকাধীন ওই ভবনসহ ডা. আকবর হোসেন ও সিরাজুল ইসলামসহ প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গোটা এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতে বৃহস্পতিবার দখলদারদের একটি পক্ষ সংবাদকর্মীসহ যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্যদের উপর হামলা করে। ওই ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়েরের পর থেকে মলয় কুমারসহ অন্যরা পলাতক থাকার মধ্যে শনিবার যমুনার উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৯ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স।
শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বলেন, শ্যামনগরবাসীকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে সমগ্র যুমনা দখলমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। নদী দখল করে গড়ে উঠা সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন জানান, যমুনার উপর ছোট বড় কোন অবৈধ স্থাপনা রাখা হবে না। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর অবশিষ্ট অংশ পুনঃখনন শুরু হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পুরণের কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গতঃ যমুনা নদীর উপর নির্মিত যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য প্রায় দুই দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল শ্যামনগরবাসী। কিন্তু স্থানীয় কিছু অবৈধ দখলদার তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ার কারণে নদী খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। অনেকে নদীর পাড় দখল পূর্বক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করে আসছিল। যমুনা নদী খনন কাজ নির্বিঘেœ করতে অবৈধ দখলদারদেরকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বার বার বলা সত্বেও কোন কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষনা দিয়ে গত ৬ জুন মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় শ্যামনগর মহাশ্বশান সংলগ্ন যমুনা নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.এস এম জহুরুল হায়দার (বাবু)। এতে করে শ্যামনগরের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষীত যমুনা নদী পুনঃখনের কাজ পূনরায় শুরু করা হয়।