স্বপন কুমার রায়,খুলনাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবের ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী আজ।সাধারন থেকে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক হয়েছিলেন-তা সম্ভব হয়েছে তার জীবনে কিছু মানুষের সহযোগিতাএ ক্ষেত্রে সবার আগে উচ্চারিত হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম।সহধমিণী হিসাবে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিটি সংগ্রামে তার পাশে থেকে জুগিয়েছেন নিরন্তর সাহস ও অনুপ্রেরণা।পাশাপাশি কিছু দারুণ গুরুত্বপুর্ণ রাজনৈতিক সিদান্ত গ্রহণে তিনি সুযোগ্য পরামর্শও দিতেন শেখ মুজিব কে।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া
গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।তার ডাক নাম ছিল রেনু।
বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে
আরা বেগম।একভাই দুবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট।উত্তরাধিকার সূত্রেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা তৎকালীন সময়ে সম্প্রত্তি লাভ করেছিলেন।তবে সেই সম্প্রত্তি কখনই নিজের ভোগ বিলাসে ব্যয় করেননি।পৈতিৃক সম্প্রতি থেকে যে অর্থ আসতো
তা তিনি জমিয়ে রাখতেন।নিজের স্বাদ-আহ্রলাদ পুরণে খরচ না করে তুলে দিতেন শেখ মুজিবের হাতে।
বঙ্গবন্ধু তার জীবনের লম্বা একটা সময় পার
করেছিলেন কারাগারে।তার অর্তমানে মামলা মামলা পরিচালনা ব্যবস্হা করা,দলকে সংগঠিত রাখা ও আন্দোলন পরিচালনাসহ প্রতিটি কাজে অত্যান্ত্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বেগম মুজিব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, একজন নারীর এমন অনমনীয় মনোভাব এবং তার নিজের জন্য না, নিজের সুখের না, তার স্বামীর যাতে কোনো অবস্থাতে নীতি ভ্রষ্ট না হয় এই জায়গাটা উপলব্ধি করা এবং শক্ত থাকা, অবিচল থাকা এটা অতুলনীয়।
এতো কিছুর মাঝে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ছিলে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। তার উপদেশের রেশ ধরেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির পিতার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় একটা উদ্যোগ দেয়ার কথা আসলো, সেখানে তিনি (শেখ ফজিলাতুন্নেছা) কোনো অবস্থাতেই একমত হন নাই এবং অনেকেই এটাও বলেছিল যে, আপনি তো বিধবা হবেন। তখন তিনি বলেছেন যে, বিধবা হলে আমি হবো, কিন্তু এই যে বাংলার মানুষ, যাদের জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার এই ধ্যান-ধারণা, সাধনা এটা তো আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না।
রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রী হয়েও অনন্য ছিলেন বেগম মুজিব। যার প্রমাণ পাওয়া যায় জাতির পিতার লেখনীতে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তার জীবনের বৃহৎ অবলম্বন দু’টি; প্রথমটি আত্মবিশ্বাস আর দ্বিতীয়টি স্ত্রী রেণু।
বেগম মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু অফিস করেছেন গণভবনে কিন্তু গণভবনের এতো সুন্দর পরিবেশ, শ্যামলিমা, এতো জায়গার পরিধি কিন্তু বেগম মুজিবকে ওটা (গণভবন) টানেনি।তাকে টেনেছে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের কবুতরের পরিচর্যা বা ইত্যাদি।
বঙ্গমাতা কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন একটি সংগ্রামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা কোটি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সাথে দ্বিধাহীনভাবে যুক্ত করেছিলে নিপীড়ন মোকাবেলা করবার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা।