কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ২৪/১১/২৩
কুড়িগ্রাম জেলার সাংসদ অধ্যাপক এম এ মতিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি অভিযোগ তুলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু। অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মতিন কুড়িগ্রাম-৪ (উলিপুর) আসনের সাংসদ সদস্য।
উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, এম এ মতিন একাদশ জাতীয় সংসদে দলীয় প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হন। বরাবরই আওয়ামীলীগের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা। এর আগে তিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করতেন। এরপরও কি ভাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমাদের জানা নেই। দলের সিদ্ধান্তে তার পক্ষে কাজ করেছি। এমপি হয়েই জড়িয়ে পড়েন সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের সাথে। দলে গ্রুপিং করে বিভক্তির সৃষ্টি করেন। নেতাকর্মীদের সাথে সব সময় অসৌজন্য মুলক আচরণ করায় সবাই ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ঠ। ফলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে তাকে যেন দ্বাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া না হয় তা অবহিত করতে এবং বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে লিখিত জানিয়েছি।
উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা বলেন, একজন মানুষের কারণে দলের শৃঙ্খলা থাকছে না। তার সীমাহীন দুর্নীতি এবং অপকর্মের দায় এখন দল ও সরকারকে নিতে হচ্ছে। সরকারের এতো উন্নয়ন এবং জনকল্যানকর কাজের সুফল যেন ঘরে ঊঠে সে জন্য ক্লিন ইমেজ, জনপ্রিয় এবং দুর্নীতি মুক্ত প্রার্থী চাই। একই সঙ্গে দুর্নতি ও সকল অপকর্মের হোতা এম এ মতিনের বিচার চেয়েছি আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এ দাবী কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের ভুক্তভোগী সকল মানুষের। আমাদের লিখিত আবেদনটি প্রাধনমন্ত্রীর দপ্তরে গত ১২ নভেম্বর রিসিভ করে। আমরা আশাবাদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার আমরা পাবো।
লিখিত আবেদনে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির অভিযোগ গুলো হলো-সরকারের দেয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটা বরাদ্ধেও ডিও টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের নামে প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনের ডিওলেটার প্রদান বাবদ এক লাখ টাকা করে আদায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪জন নৈশ প্রহরী নিয়োগে ৮লাখ কওে ৩২লাখ টাকা উৎকোচ আদায়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও প্রভাব খাটিয়ে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর নামের সাথে মুক্তিযোদ্ধা তকমা লাগানো। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যানদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে জোড় করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নিজ স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। দলের নেতা ,কর্মী, সমর্থক এবং সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেও সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করার অভিযোগ তোলা হয়।
সর্বশেষ অভিযোগে বলা হয় ” অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় তিনি (এম এ মতিন) সর্বত্র জোড় প্রচার চালাচ্ছেন যে, আপনার পরিবারের বিশেষ এক ব্যক্তিকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করেছেন এবং সেইহেতু তার মনোনয়ন নিশ্চিত।”
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এই চিঠি কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। দলের মধ্যে বিরোধীতা প্রকাশ্যে আসায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষও একটু একটু করে মুখ খুলছেন। করছেন এমপি এবং এমপির পরিবারের সদস্যদের নানা অপকর্মের সমালোচনা।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক এম এ মতিন এমপি এর (০১৭১৫১৫৭৫৩২) সেল ফোনে কয়েক দফা কল করে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।