কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত নেই তবুও নাম আছে কৃষি প্রণোদনার তালিকায়। আবার তালিকায় নাম আছে এমন অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনও অনেক কৃষক আছেন। বিকাশ বিশ্বাস পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। উপজেলার চাপরাইল বাজারে রয়েছে তার একটি ঔষধের দোকান। তিনি ভাটাডাঙ্গা গ্রামের সন্তেশ বিশ্বাসের ছেলে। তার স্ত্রী ববিতা বিশ্বাস কালীগঞ্জে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন।
এই দম্পতির কেউ কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্তা না থাকলেও তাদের নাম রয়েছে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রাণোদনা কর্মসূচির আওতায় ভুট্টা আবাদে দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে উপকরন বিতরণের তালিকায়।
তাদের দুজনের স্ব-স্ব জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে কৃষি অফিস থেকে উঠানো হয়েছে ২ কেজি ভুট্টার বীজ, ১০ কেজি পটাশ ও ২০ কেজি ঢ্যাপ সার (মোট ৪ কেজি বীজ ও ৬০ কেজি সার)। এ দম্পতির নাম ব্যবহার করে সরকারি প্রাণোদনার মাল তোলা হলেও তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নে এই অর্থ বছরে সরকারি প্রণোদনার আওতায় জনপ্রতি ২ কেজি ভুট্টার বীজ ও ৩০ কেজি সার প্রদানের জন্য ১শ জন প্রান্তিক কৃষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার প্রদান করা হয়।
কিন্তু প্রস্তুতকৃত তালিকার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। অনেকের তালিকায় নাম আছে কিন্তু বীজ সার কিছুই পাননি। আবার অনেকের কৃষি অফিসের অন্যান্য প্রণোদনার যেমন – সরিষা, পেঁয়াজ, ধান এর তালিকাতেও নাম রযেছে। আবার ভুট্টা প্রণোদনায় তালিকায় একই ব্যক্তির নাম দুইবার উল্লেখ করে সার ও বীজ উত্তোলন করা হয়েছে ( ১৩ ও ৯০ নং)। রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাটাডাঙ্গা গ্রামের বিকাশ ও ববিতা দম্পতির মতো আরো অনেকের নাম দিয়ে সরকারী বীজ ও সার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া রায়হানের বিরুদ্ধে এ তালিকায় সিংগী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা একই গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে জিল্লুর রহমান (চাকুরিজীবী),ফজলু রহমানের ছেলে চা দোকানী সিহাব উদ্দিন,ভাটাডাঙ্গা গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে আব্দুল কাদের সহ অনেকের নাম থাকলেও তারা কোন বীজ সার পাননি। এমনকি এই প্রণোদনায় তাদের নাম আছে সেটাও তারা জানতেন না। শুধু তাই নয়, তালিকায় নাম থাকা অনেকেই প্রকৃত কৃষক নয়। আবার যারা বীজ ও সার পেয়েছেন তারা তাদের জমিতে ভুট্টা চাষও করেন নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুব আলম রনি দায়িত্বে অবহেলার কারনে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করে কৃষকের সরকারী অনুদানের বীজ ও সার আত্মসাৎ করেছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেন।
তালিকায় নাম থেকেও মাল না পাওয়া এক ভুক্তভোগী কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া রায়হান প্রকৃত কৃষকদের নাম না দিয়ে নামে বেনামে সরকারী মাল তুলে নেয়। অসৎ উপায়ে তিনি প্রকৃত কৃষকদের হক মেরে দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজগে তিনি প্রতিটি প্রণোদনায় এমন করেন। কৃষকদের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। নিয়মিত এলাকাতেও আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে। ইতিপূর্বে এই কৃষিকর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতায় কৃষকের পেঁয়াজের প্রণোদনার টাকা আটকে রাখা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তিনি সেই টাকা দিতে বাধ্য হন। এভাবে একের পর এক অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করে কৃষি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন।