মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,, দিনমজুর ফুফুর ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ৩ শিশু । স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে রেখে ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার করছেন বাবা। অভাবে অন্যের হাত ধরে মাও পালিয়েছেন শিশুদের রেখে। নানা-নানির অভাবের সংসারেও বেশি দিন ঠায় হয়নি, দাদা-দাদিও নেই তাদের। একমাত্র ফুফু তিন শিশুর দায়িত্ব নিলেও পড়েছেন বিপাকে। শুনতে সিনেমার কাহিনীর মতো মনে হলেও বাস্তবে এমনি হৃদয় বিদায়ক ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় । ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের জগধা এলাকার পয়গাম আলী। প্রায় দেড় বছর আগে সন্তান সম্ভবা স্ত্রী সহ ২ শিশু সন্তানকে রেখে ঢাকায় গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী আশা আক্তার ২ সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে অভাবের মধ্যেই দিন পার করতে থাকেন। তৃতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৮ মাস পর্যন্ত সন্তানদের লালন পালন করেন আশা আক্তার। অবশেষে গত ২ মাস আগে সেই মা আশা আক্তারও পালিয়ে যান অন্যের হাত ধরে। ৭ বছরে প্রিয়া, ৫ বছরের মিম ও ১০ মাস বয়সি আশিকের আশ্রয় হয় ভ্যান চালক নানার বাড়ি। স্থানীয়দের সহায়তায় ভ্যান চালক নানা ৩ ভাই বোনকে খাওয়াতে হিমশিম খেয়ে যান। পরে তাদের ঠায় হয় একমাত্র ফুফু রাশেদা বেগমের কাছে। এদিকে রাশেদা বেগমের অভাবে সংসারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বাবা-মা ছাড়া ঐ ৩ শিশু। ৩ বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই তাদের। ফুফুর বিদ্যুৎহীন ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, খাবারের চিন্তায় ৩ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন দিন মজুর ফুফু রাশেদা বেগম। দেখভালের দ্বায়িত্ব নিলেও তার পক্ষে ভরণ পোষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া শিশুদের রেখে তিনিও কাজে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় ভাইয়ের ৩ সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন রাশেদা বেগম। খাবারের চিন্তায় ৩ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন দিন মজুর ফুফু রাশেদা বেগম। খাবারের চিন্তায় ৩ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন দিন মজুর ফুফু রাশেদা বেগম। রাশেদা বেগম বলেন, ‘তাদের খাবার নেই। আমিও শ্রমিকের কাজ করি। তাদের রেখে এখন আমিও কাজে যেতে পারি না। প্রশাসন সহ স্থানীয়রা সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে শিশুদের বাঁচাতে পারব। তা না হলে আমি আর পারছি না।’ ৩ শিশুর লালন-পালনে প্রশাসন সহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন রাশেদা বেগম। রিপন আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাসেদা বেগমের স্বামী নেই। ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ভাঙা টিনের ঘরে বসবাস করেন। বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। অন্ধকার ঘরে ৩ শিশুকে নিয়ে নিজে খেয়ে না খেয়ে ভাইয়ের ৩ সন্তানকে মানুষ করছেন। কিছুদিন আগে শিশুগুলো অসুস্থ ছিল, সেবা দিয়ে সুস্থ করেন রাশেদা। এখন মানুষের দেওয়া সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে, কারণ শিশুদের রেখে তিনি কাজে যেতে পারেন না।’ ভাইয়ের ৩ সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর রাশেদা বেগম। রুবেল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘অভাবের কারণে বাবার পরে মা শিশুদের রেখে পালিয়ে গেছে। শিশুরা তাদের ফুফুর কাছে মানবেতর জীবন করছে। শিশুদের দেখে মায়া লাগে। সমাজের সচেতন মানুষদের এগিয়ে আশা খুবই জরুরি।’ স্থানীয় রহিমুল ইসলাম বলেন, ‘৩ অবুঝ শিশুকে রেখে বাবা-মা ২ জনে পালিয়ে গেছে। তাদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। তারা নিষ্ঠুর, পাষাণের মতো কাজ করেছে। তাদের শাস্তি প্রয়োজন।’ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রমিজ আলম বলেন, ‘পারিবারিক সমস্যার কারণে ৩ শিশুকে রেখে বাবা-মা পালিয়ে গেছে। শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে জানার পরে কাজ শুরু করেছি। শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’