মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ কনকনে ঠাণ্ডা, সঙ্গে হিমেল বাতাস। তীব্র শীতে জবুথবু সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য কোথাও খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছে সাধারণ মানুষ।
সাতক্ষীরার উপকূলসহ বিভিন্ন জনপদে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে।
উপকূলীয় এলাকায় শীতের সন্ধ্যায় সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা নদীর পাড়ে মুন্সিগঞ্জ জেলে পল্লীতে চারদিকে গোল হয়ে বসছেন কয়েকজন। এর মাঝে দেখা যাচ্ছে আগুনের শিখা। গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এই উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ে এমন চিত্র।
মুন্সিগঞ্জ জেলে পল্লীর গোপাল সানা বলেন, ‘ঘরের ভেতরেও যেন ঠাণ্ডায় থাকা দায়, বাইরে তো হাড়কাঁপুনি শীত। তাই কয়েকজনকে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
মুন্সিগঞ্জ জেলা পাড়ার বাঘ বিধবা সোনামণি দাসী বলেন, একটাই পাতলা ছেঁড়া কম্বল আমার সম্বল। রাতে এই পাতলা কম্বলডা পেঁচায়েই শুয়ে থাকি। শীতের আর কাপড় নেই। ঠান্ডা লাগলে কি আর করবো। সুন্ধে হলি (সন্ধ্যা হলে) খুব ঠান্ডা লাগে। এবার কেউ একটা খেতা (কাঁথা) কম্বলও দেইনি। এক কাপড়ে শীত যায় না, কেউ কাপড় দিতেও আসে না বাপ। শীতে টিকতি পারি না। কাপড় কেনার সাধ্য নেই। নদীতে কাঁকড়া ধরে খেতাম, সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। এখন খাইতেই পাই না, আর শীতের কাপড় কিনবো কিভাবে। অনেক কষ্ট হয়।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রামের মৃত বাহার আলী সরদারের ছেলে গফুর সরদার (৭২) ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৬০) বসবাস করেন খোলপেটুয়া নদীর চরে। দুই মেয়ে এক ছেলে তাদের। মেয়ে দুইটাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে থাকেন পাশেই। ছেলের কথা শুনতেই কান্না জড়িত কন্ঠে গফুর সরদার বলেন, ছেলের কথা আর শুনো না বাপু। ছেলে আমার নেই।
তাদের সংসার কিভাবে চলে এবং শীতের কাপড় আছে কিনা জানতেই গফুর সরদার বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে সংসার চলে আমাদের। গ্রামে গ্রামে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে তিনবেলা খাইতেই পাই না। শীতের কাপড়ের দাম বেশি, কেনার পয়সা নেই। ছেঁড়া কাপড়ে শীত যায় না। এত শীত পড়তেছে তা একটা কম্বল দেয়নি কেউ।
সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে এখনো শীতার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত গরম কাপড় বা কম্বল বিতরণ করা হয়নি জানিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, শীত নিবারণে গরম কাপড় বিতরণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসছে। ছেলে-মেয়েরাও ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। নিম্ন আয়ের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে কাহিল হয়ে পড়ছে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, রোববার (৫ জানুয়ারি) বেলা ৩ টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছ ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়ার্স। গত ১৫ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমবে। ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন।
সমাজকর্মীরা বলছেন, সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। তাই এই শীতে সরকারের পাশাপাশি এই এলাকার বিত্তবানদের সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ।