

বদরুদ্দোজা প্রধান পঞ্চগড় প্রতিনিধি পঞ্চগড়ের বিস্তীর্ণ চা বাগানগুলোতে কয়েক মাস আগের খরার ক্ষত এখনো শুকোয়নি। এর মধ্যেই চা চাষিদের সামনে দেখা দিয়েছে নতুন এক বড় হুমকি—ডাইব্যাক। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই পাতাপচা রোগে আক্রান্ত গাছের ডাল ও পাতা কালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চা পাতার ফলন, বাড়ছে পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ, আর চাষিদের কপালে ভাঁজ পড়ছে প্রতিদিনই। চা বোর্ড নতুন এই রোগটির নাম দিয়েছে ডাইব্যাক। রোগটি প্রথমে চা গাছের কাণ্ডে আক্রমণ করে—কাণ্ড কালো হয়ে যায়, এরপর ধীরে ধীরে পাতা পচে শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্থানীয় চাষিদের মতে, প্রচণ্ড গরম ও দীর্ঘস্থায়ী খরার পর থেকেই এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। শালবাহান রোড এলাকার চা চাষি ফারুক মণ্ডল জানান, “নরম ডগা কালচে হয়ে পচে যাচ্ছে। কাঁচা পাতার বাজারদর এখন ২৪ থেকে ২৬ টাকা কেজি হলেও রোগে আক্রান্ত বাগানের সঠিক পরিচর্যা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।” একই এলাকার আরেক চাষি সাঈদুর রহমান বলেন, “বাগান বাঁচাতে সার ও কীটনাশকে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। তারপরও রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এতে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।” চা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী শামীম আল মামুন জানান, তাঁরা আক্রান্ত চাষিদের কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের ওষুধ, যেমন সানভিট, হেমোক্সি বা ব্লিটক্স ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, খরার পর চা বাগানে লাল মাকড় ও লোফারের আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এখন শুরু হয়েছে পাতাপচা রোগ। আক্রান্ত বাগানে কপার হাইড্রোক্সাইড বা কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম স্প্রের ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় স্প্রে করলে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বছর কাঁচা চা পাতার দাম তুলনামূলক ভালো থাকলেও চাষিদের মুখে তেমন হাসি নেই। একদিকে পোকার আক্রমণ, অন্যদিকে নতুন রোগের সংক্রমণ—সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও ফলন কমে যাওয়ায় লাভের অঙ্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেক চাষি আশঙ্কা করছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ডাইব্যাক রোগটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা পঞ্চগড়ের চা শিল্পে বড় ধাক্কা দেবে।