

পঞ্চগড় প্রতিনিধি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. ইসাহাক আলীর কক্ষে তথ্য জানতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকরা গত অর্থবছরে আমদানি–রপ্তানি খাত থেকে সরকারের কত রাজস্ব আয় হয়েছে—এ তথ্য জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমার কাজ নেই আপনাদের তথ্য দিয়ে চাকরি হারাবো। কমিশনারের অনুমতি নিয়ে আসুন, তারপর তথ্য পাবেন।’ পরে তিনি সাংবাদিকদের কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর কাস্টমস কমিশনারকে অবহিত করা হলে কমিশনারকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনারের প্রটোকল কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানান, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি কমিশনারকে জানানো হবে।’ এর আগে জানা যায়, সহকারী কমিশনার ইসাহাক আলীর বদলির আদেশ ইতিমধ্যেই হয়েছে। বন্দরের ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের অভিযোগ, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে অবৈধ টাকা আদায় করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বকেয়া টাকা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন। ব্যবসায়ীরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি রপ্তানীকৃত কনসাইনমেন্ট থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এছাড়া প্রতিটন পাথরের ওপর ১০ টাকা হারে অবৈধ আদায় করা হয়। প্রতিদিন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টন পাথর প্রবেশ করে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানিও হয়। ফলে প্রতিদিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এ টাকা না দিলে কাস্টমস নানা অজুহাতে বিড়ম্বনায় ফেলে। ফলে বাধ্য হয়েই তারা এই ঘুষ দিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধারাবাহিকতা চলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাংলাবান্ধা দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর। ভারত, ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম হয়। প্রধান আমদানির পণ্য পাথর, আর রপ্তানির মধ্যে রয়েছে আলু, পাট, ঔষধ ও গ্রামীণ ঝুটসহ অনুমোদিত অন্যান্য পণ্য। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তাদের এই ঘুষ–অনিয়ম ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর এড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও আশঙ্কাজনক হারে কমছে।