মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাড়িয়ে নিজেকে সকলের কাছে জয়িতা হিসেবে পরিচিত করা মোছা: মহসিনা আক্তার। হাটি হাটি পা পা ২০০৮ সাল থেকে মিস্টির কাটুন বানিয়ে ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন তিনি। এ সময় বাসায় নিজেই কিছু মিষ্টির কাটুন বানিয়ে সেগুলো ২/৩ টি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে ব্যবসা শুরু করেন। ধিরে ধিরে তার ব্যবসার পরিধি কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে তার ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ধরন একটু ভিন্ন। কারণ তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ জন প্রতিবন্ধী মিস্টির কাটুন বানিয়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন। এ কারনে সম্প্রতি জেলা ও সদর উপজেলার জয়িতা হিসেবে “আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ” ও “বেগম রোকেয়া দিবস” উদযাপন অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের গোবিন্দনগর কোনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহসিনা আক্তার। তিনি সেখানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “চ্যামেলী প্রতিবন্ধী প্যাকেজিং বক্স” গড়ে তুলেছেন। প্রথমে ওই প্রতিষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী, দুস্থ, অসহায়, এতিমদের মিষ্টির কাটুন তৈরী বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরে সেখানেই তাদের জন্য কর্মসংস্থানের তৈরী হয়। প্রতিদিন ১০-১৫ জন প্রতিবন্ধী সেখানে মিষ্টির কাটুন তৈরী করছেন। এছাড়াও সদর উপজেলার পটুয়ায় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরী ও ব্যাটারীর পানি তৈরীর কারখানা স্থাপন করেছেন মহসিনা আক্তার। সেখানেও ৮/১০ জন বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব ইকো বøক ইট তৈরী ও একটি কালার প্রিন্টিং প্রেস দেওয়ার ইচ্ছা পোষন করে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টির আগ্রহ জানিয়েছেন তিনি। গোবিন্দনগর কোনপাড়ায় তার মিষ্টির কাটুন তৈরীর কারখানায় গিয়ে জানা যায়। সেখানে প্রতিদিন ১০-১৫ জন প্রতিবন্ধী কাজ করে থাকেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার চিলারং ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুস সালাম, ভেলাজান গ্রামের প্রতিবন্ধী রাজু ইসলাম ও রায়পুর ইউনিয়নের দেহন গ্রামের রানী বেগম কাজ করছেন। তারা বলেন, আমরা এখানে ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মিষ্টির কাটুন বানাই। তবে চাহিদা বেশি থাকলে আরও বেশি সময় ধরে কাজ করি। এখানে কাজ করে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলে জানান। জয়িতা মোছা: মহসিনা বেগম বলেন, ২০০৮ সালে প্রথমে নিজেই মিষ্টির কাটুন তৈরী করে ২/৩টি হোটেলে সরবরাহ করে ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। পরে বেসরকারী ২/১ টি এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋন নিয়ে ব্যবসার পরিধি কিছুটা বাড়ে। পরে বিসিক ও ও নাসির গ্রæপ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে মিষ্টির কাটুন তৈরী বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে সেখানে প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বর্তমানে সদর উপজেলার রোড, রুহিয়া, আটোয়ারীর প্রায় ১১টি প্রতিষ্ঠানে মিষ্টির কাটুন সরবরাহ করছি। এছাড়াও প্রতি মাসে প্রায় ১২টন ভার্মি কম্পোস্ট ও প্রতিদিন গড়ে ১২০ বোতল ব্যাটারির পানি বিভিন্নখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মিষ্টির কাটুনের “লেমিনেশন” মেশিন কিনেছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নাম ও মোবাইল নাম্বার দিলে আমি নিজেই প্রেসে গিয়ে সেগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ডিজাইন করি। বাসায় কেটে লেমিনেশন করে প্রতিবন্ধী কর্মচারীদের দিয়ে শেষে কাটুন বানিয়ে তা সরবরাহ করে থাকি, এতে আমার ছাপানোয় অনেক টাকা বেশি করচ হয়। ভবিষ্যতে একটি কালার প্রিন্টিং প্রেস দিলে আমার খরচ কিছুটা লাঘব হতো। প্রিন্টিং প্রেস ও ইকো বøক ইট তৈরীর কারখানা দিলে আরও কিছু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে; এ কারনে আর্থিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করছি।
বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক নুরেল হক বলেন, নারী উদ্যোক্তা মহিসনা আক্তারকে বিসিকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা লাভে সুপারিশ করা হয়। ভবিষ্যতেও তিনি যদি কোন প্রকার নতুন প্রতিষ্ঠান দিতে চান বিসিকের পক্ষ থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অ: দা:) মোছা: জিন্নাতারা ইয়াছমিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।