

বিপ্লব পাল,সিলেট: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, ওয়াশরুম, রোগীদের খাবার পরিবেশন ব্যবস্থা ও প্যাথলজি বিভাগ ঘুরে দেখেন কর্মকর্তারা। দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানকালে প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়ে একাধিক অনিয়ম। এর মধ্যে রয়েছে—হাসপাতাল জুড়ে অপরিচ্ছন্নতা, আউটসোর্সিংয়ে অনিয়ম, ২৬২ জন কর্মচারীর বেতন তিন মাস ধরে আটকে রাখা, রোগীদের খাবার মেনুর চেয়ে কম দেওয়া, হাসপাতালের ওষুধ বাইরে বিক্রি, প্রয়োজনীয় ওষুধ রোগীদের না দেওয়া এবং অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ দেখিয়ে প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসে বাড়তি ১৮ হাজার টাকা করে নেওয়া। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানে পাওয়া এসব অনিয়মের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে করা হবে প্রয়োজনীয় সুপারিশ। ৯০০ শয্যার ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। তবে এসব বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মেলেনি। অভিযানের পরে দুদক সিলেটের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীদের ওয়ার্ডজুড়ে অপরিচ্ছন্নতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শন করে আমরা দেখলাম যে, রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ওয়ার্ডের যে টয়লেট গুলো, তা খুব অপরিষ্কার এবং এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এখানে রোগীর সঙ্গে যারা আসবে, তারাও অসুস্থ হওয়ার অবস্থা। আমাদের আসার খবর পেয়ে দেখেছি তারা টয়লেট পরিষ্কারে কাজ করছে।’ দুদকের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ে গরিব মানুষ, যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন বা বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন, তাঁদের গত তিন মাস ধরে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ ২৬২ জন কর্মচারীর টাকা আটকে রেখেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ রকম তাঁদের ৪-৬ মাসের টাকা আটকে রাখে। পরে তাঁদের কাছ থেকে কিছু ঘুষ নেয়। যেমন পাঁচ মাসে যদি তাঁদের ৮০ হাজার টাকা হয়, সেখানে দেয় ৫০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকা করে প্রতিজনের কাছ থেকে রেখে দেয়, এ রকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যার কারণে বিভিন্ন রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছে তারা হাত পাতে। টাকা ছাড়া কাজ করে না।’ জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘রোগীদের বিভিন্ন কেবিনে ও ওয়ার্ডে যে খাবারগুলো দেয়, মেনুর চেয়ে খাবার অনেক কম দেওয়া হয়। এটা আমরা ৮-১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সত্যতা পেয়েছি।’ সরকারি ওষুধ হাসপাতালের বাইরে বিক্রির কথা জানিয়ে জুয়েল মজুমদার আরও বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ দেখিয়ে প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসে বাড়তি ১৮ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। দুদকের এই অভিযানে ধরা পড়া অনিয়মের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। আগে হাসপাতালের নিজস্ব সরকারি ষ্টাপ ছিল,অনেকেই অবসরে চলে গেছেন,অনেকে চলে যাবেন।তাদের শুন্য পদে লোক নিয়োগ না দিয়ে প্রাইভেট বিভিন্ন কোম্পানির নামে হাসপাতাল ইজারা দেওয়া হয়েছে।তাতে বড় অংকের ঘুষ বাণিজ্য রয়েছে। কোম্পানি নাম মাত্র বেতনে চাকরিতে লোক নিয়োগ দেয়।এই বেতনে তাদের সংসার চলে না,তারপর কোম্পানির কর্মকর্তাকে ঘুষ, ইত্যাদি মেনেজ করতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা অনিয়মের আশ্রয় নেয়।তাতে সাধারন রোগীদের দুর্ভোগ,ও হয়রানি বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন থেকে সরকারি ভাবে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে না,সে কারনে সরকারি কর্মকর্তা নেই বললে চলে।অভিলম্বে সরকার হাসপাতালের বিভিন্ন পদে যোগ্য কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের আগে পরিবেশে ফিরিয়ে আনার দাবী ভুক্তভোগী ও সচেতন মানুষের দাবী।