সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী, দুর্গাপুর ও তবুকপুর ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় দুর্গাপুর ও তবুকপুর ইউনিয়নের পাঁচ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হলেও পরে আবার শুরু হয়।
বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহিন মিয়া এবং দুর্গাপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা আহসান হাবিব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের কাশেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করা নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খন্দকারের সমর্থকদের সঙ্গে হাতপাখার মতিউর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নেওয়ার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একইভাবে দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে কোন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা এই চেষ্টা চালিয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুড়াবুড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়ে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে সরকারি সম্পদ রক্ষায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। ইউনিয়নের ৯৬নং কেন্দ্রে চার এবং ৯৭নং কেন্দ্রে একাধিক দফায় কয়েক রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কিছু সময় ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শুরু হয়।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহিন মিয়া জানান, ওই ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
তিনি বলেন, ‘সাময়িক একটা ঝামেলা হয়েছিল, পরে সেটা সমাধান হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়েছে।’ তবে পুলিশ ঠিক কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি কেন্দ্রে (পুরুষ ও নারী কেন্দ্র) ভোটের সিল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলেও সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বারবার আশ্বস্ত করলেও তারা আর ভোট নেননি।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, ‘দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র, ওই ইউনিয়নের গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কামালখামার মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ মোট চার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।’
দুর্গাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার গোলাম ফেরদৌস বলেন, ‘দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রসহ ওই ইউনিয়নের মোট চারটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।’
এ ছাড়া, উলিপুর উপজেলার তবুকপুর ইউনিয়নের তবুকপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।