উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। শয্যা সংকটে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বূধবার রাতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গেলে কর্তব্যরত নার্স জানান, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগীর মধ্যে শিশুই বেশি। ১২ বেডের এই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সোমবার ২২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৬ শিশুসহ নতুন ২০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ওয়ার্ডে ৫১ শিশুসহ রোগী সংখ্যা ৫৭ জন।
দায়িত্বরত নার্স লাবনী বেগম জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
রোগী বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) পুলক কুমার জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু আক্রান্তের হার বেশি।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ আল আমিন মাসুদ জানান, ‘শীত এলেই শিশুরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। এখন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। এ অবস্থায় শিশুদের বাইরের খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেজন্য শীতের মধ্যে শিশুদের বাইরে বের করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে।’
গ্রামের মানুষদের মধ্যে খাওয়ার স্যালাইন নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সচেতনতার অভাবে গ্রামে অনেকেই শিশুদের ঘন স্যালাইন খাওয়ান। এটা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্যালাইন গোলানোর ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে আধা লিটার পানিতে পুরো স্যালাইন গুলিয়ে সঠিক নিয়মে শিশুদের খাওয়াতে হবে।’
এদিকে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এতে করে ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের (কৃষি ও সিনপটিক) পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তবে আকাশে মেঘ বাড়লে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
শীত মোকাবিলায় জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানায়, শীত মোকাবিলায় জেলার ৯ উপজেলায় ও তিন পৌরসভায় ৩৫ হাজার ৭০০ পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছিন্নমূল মানুষের শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য উপজেলার চাহিদা ভেদে ৮ থেকে ১৪ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।