লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। মাত্র ৪ বছরের শিশু লামিয়া আক্তার। মাকে প্রায় ২৫দিন ধরে না দেখতে পেয়ে তার কান্না থামছেই না। ঘুমের ঘরেই আম্মু আম্মু বলে ডাকছে শিশু লামিয়া। খাওয়া বন্ধ একেবারে করে দিয়েছে শিশুটি। তাই বাবা সোহেল মিয়ার কোলে চরে মাকে খুঁজতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন লালমনিরহাটের আদিতমারীতে। কিন্তু খোঁজ পেয়েও পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আবারও ঢাকায় ফিরে গেলেন শিশুটি। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার সামনে বাবা সোহেল মিয়ার কোলে দেখা যায়। এসময় তার সাথে ছিলেন শিশুটির দাদি ও খালা। এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় আসেন শিশু লামিয়ার বাবা সোহেল মিয়া তার দাদী রিনা বেগম। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস সোহেল মিয়া ও বন্যার আক্তার বিথী দম্পতি। গত ৬ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ে পর একটি ফুটফুটে শিশু কন্যার জন্ম দেন বিথী। এরপর সুখের সংসার ছিল তাদের। গত ১৬ জানুয়ারি চার বছরের শিশু লামিয়াকে ছেড়ে মা বন্যার আক্তার বিথী লালমনিরহাটের যুবক মাসুম মিয়ার হাত ধরে চলে আসেন লালমনিরহাটে আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বারোঘড়িয়া গ্রামের সজিব বাজার এলাকায়। এর মধ্যে কেটে যায় ২০/২২ দিন। এর পর মায়ের খোঁজ পেয়ে ঢাকা থেকে বাবার কোলে চড়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় আসেন শিশু লামিয়া। যে বাড়িতে মা বিথী উঠেছে দুইদিন ধরে খুঁজে খোঁজ পান সেই বাড়িটি। শিশুটির কথা বলে তার মাকে ফেরত চান শিশুটির বাবা সোহেল মিয়া। কিন্তু যুবক মাসুম মিয়ার বাবা তাকে দিতে নারাজ এবং তাদেরকে অপমান করে ফিরে দেন। এরপর ওইদিন আদিতমারী থানায় যান শিশু লামিয়াসহ পুরো পরিবার। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়ে ওই বাড়িতে যাওয়াতে আদিতমারী থানার ওসি তাদের উপর ক্ষেপে যান। পরে তারা ভয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে আবারও ফিরে যান। ঢাকা থেকে নিয়ে আসা যুবক মাসুম মিয়া (২৫) লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ভাদাই ইউনিয়নের বারোঘড়িয়া গ্রামের সজিব বাজার এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। শিশুর মা বন্যা আক্তার বিথী মাত্র আট বছরের শিশু থাকা অবস্থায় বাবা আব্দুল করিম ও মা মিনোয়ারা বেগম মারা যান। সে থেকেই বিথী ফুফু মিনা বেগমের কাছে বড় হন। পরে ফুফু মিনা বেগম তার বিয়ে দেন সোহেল নামে এক যুবকের সাথে। বিথীর ফুফু রিনা বেগম বলেন, ভাতিজির সন্ধান পেয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ছুটে এসেছি । কিন্তু ওই যুবকের বাড়িতে গিয়েও তার বাবা জেনেও ছেলের ঠিকানা দেয়নি। ঢাকা গিয়ে আইনের আশ্রয় নিব। চার বছরের শিশুকে ছেড়ে কোন মা অন্যের হাত ধরে আসতে পারে না। তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সোহেল মিয়া জানান, আমার স্ত্রী বন্যা আক্তার বিথী ভুল করে লালমনিরহাটে চলে আসছে তাই আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে নিতে এসেছিলাম। মেয়ে লামিয়ার মুখ দেখে যদি তিনি ফিরে যান তাহলে আমি তাকে নিয়ে আবার সংসার করতে রাজি ছিলাম। শিশুটির মুখ দেখে আমার স্ত্রীকে আমি ফেরত চাই। কিন্তু ওই যুবকের বাবা ছোট্ট শিশুটির মুখ দেখেও আমার স্ত্রীকে ফিরে দেয়নি। থানায় গিয়েও কোন সহযোগীতা পেলাম না। আমি এখন এই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো। এবিষয়ে আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন, তারা গত শনিবার শুধু থানায় এসেছিল। এরপর আর থানায় আসেনি। সেদিন তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা খোঁজ পেলে আমাদের জানালে উদ্ধার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। থানায় বিষয়টি আগে না জানিয়ে ওই যুবকের বাড়িতে যাওয়াতে শুধু প্রশ্ন করা হয়েছিল।ঢাকায় যেহেতু নিখোঁজ জিডি করেছেন, তাই তাদের আগে থানায় আসা প্রয়োজন ছিল। এর বাহিরে আর কিছু বলা হয়নি বলেও তিনি জানান।