
বগুড়ার মেয়ে ড. সাদিয়া আফরিনের বৈশ্বিক গবেষণায় গৌরবজনক সাফল্য

এম আমিরুল ইসলাম এল এল বি। বগুড়া, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া ইউনিয়নের কৃতী মেয়ে ড. সাদিয়া আফরিন আন্তর্জাতিক গবেষণাক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এক সর্বজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। সম্প্রতি ড. পায়েল সেনের নেতৃত্বে তিনি সহ ২১ জন গবেষকের একটি দল বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী Nature Communications এ একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যা বৈশ্বিক স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ড. সাদিয়া আফরিন যুক্তরাষ্ট্রের National Institute on Aging, বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে একজন জৈবিক বিজ্ঞানী (Biological Scientist) হিসেবে করমরত। প্রকাশিত গবেষণাপত্রের শিরোনাম: “Spatial transcriptomics of the aging mouse brain reveals origins of inflammation in the white matter” এই গবেষণায় স্থানিক ট্রান্সক্রিপটোমিক্স (Spatial Transcriptomics) বিশ্লেষণের মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত স্নায়বিক পরিবর্তন এবং সাদা পদার্থে (White Matter) প্রদাহের সূচনা ও ধারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক ইঁদুরের মস্তিষ্কে সাতটি স্বতন্ত্র ট্রান্সক্রিপশনাল অঞ্চল (Transcriptional Regions) চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে প্রদাহ সম্পর্কিত mRNA-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্নায়বিক কার্যকারিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট mRNA-এর প্রকাশ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে সাদ্য পদার্থের ফাইবার ট্র্যাক্টে (White Matter Fiber Tracts), যা নারীদের ক্ষেত্রে আরও তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণা নিউরোইমিউনোলজির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপাদানকে চিহ্নিত করে, যেমন: মাইক্রোগ্লিয়া সক্রিয়তা (Microglial Activation), অ্যাস্ট্রোগ্লিওসিস (Astrogliosis), কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম সক্রিয়তা (Complement Activation), এবং মাইলোইড কোষ অনুপ্রবেশ (Myeloid Cell Infiltration) ইমিউনোফলুরোসেন্স ও পরিমাণগত এমআরআই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত মাইলিন হ্রাস (Myelin Loss) এবং সক্রিয় মাইক্রোগ্লিয়ার শারীরিক মিথস্ক্রিয়া নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইন-সিলিকো পদ্ধতিতে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ এই পরিবর্তনের পেছনে সম্ভাব্য জিনগত নিয়ন্ত্রকের ইঙ্গিত দিয়েছে। গবেষণা পটভূমি: ড. সাদিয়া আফরিন ইতালির Marche Polytechnic University থেকে ক্যান্সার গবেষণায় পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার যাত্রা শুরু হয়েছিল বারডেমে ডায়াবেটিস গবেষণার মাধ্যমে। এরপর তিনি আইসিডিডিআর,বি-তে যক্ষমা (টিউবারকুলোসিস) নিয়ে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত হন। এরপর Johns Hopkins University -এ তিনি টিউমার মাইক্রোইনভায়রনমেন্ট, কোষীয় সিগন্যালিং এবং ইউটেরিন ফাইব্রয়েড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি বার্ধক্যজনিত নিউরোডিজেনারেটিভ পরিবর্তন বিশ্লেষণের লক্ষ্যে স্থানিক (Spatial) ও একক-সেল স্তরের (Single-cell) ওমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক নিউরোইমিউনোলজি, সেলুলার মেটাবলিজম, স্টেম সেল ও ৩-ডি অর্গানয়েড মডেল, মাউস মডেল, ইমিউনোস্টেইনিং, সিঙ্গল-সেল RNA সিকোয়েন্সিং এবং এপিজেনেটিক রি-প্রোগ্রামিং পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি ইতোমধ্যে ৭৫টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর সম্মিলিত সাইটেশন ৬,০০০-এর বেশি এবং তাঁর h-index বর্তমানে ৪১। ড. সাদিয়া আফরিন বলেন, “এই অর্জন এককভাবে আমার নয়-এটি আমার পরিবার শিক্ষক ও সহকর্মীদের নিঃস্বার্থ সহযোগিতার ফল। আমি বিশ্বাস করি গবেষণার মাধ্যমে আমরা সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারি এবং আমি সেই পথেই কাজ করে যেতে চাই।” তাঁর এই অর্জন কেবল বগুড়া নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের জনা এক অনন্য গর্বের বিষয়। একজন নারী গবেষক হিসেবে তাঁর অবদান আগামী প্রজন্মের তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।