
আলফাডাঙ্গায় কৃষকদল নেতাকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন পাল্টা প্রতিহত করার ঘোষণা,১৪৪ধারা জারি

আরিফুজ্জামান চাকলাদার কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদপুর-১ খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে বহিষ্কারের দাবিতে আলফাডাঙ্গা পৌরবাজার চৌরাস্তা পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধনে পাল্টা প্রতিহত(নাসির গ্রুপ) করার ঘোষণায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টা পাল্টি অবস্থান নেওয়ায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বিএনপির দীর্ঘদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব। খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ‘নাসিরগ্রুপ’ বনাম শামচুউদ্দিন মিয়া ‘ঝুনু গ্রুপ’—এই দুই মেরুর লড়াই রোববার রাস্তায় নেমে এলো। ঝুনু গ্রুপের আয়োজিত মানববন্ধন নাসির গ্রুপের লোকজন প্রতিহত করতে অবস্থান নেয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে মাঠে নামে থানা পুলিশ,অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। টান টান উত্তেজনার মধ্যে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা,অবস্থান ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় উভয় পক্ষকে। জুনু গ্রুপের একদল ক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মী হাতে ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেয়। দাবি একটাই—খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। অভিযোগ, গত ২৩ মে বেজিডাঙ্গা আমেনা ওয়াহেদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির নিজেই। আর সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মাসুদ মাস্টার। সেখানে আওয়ামী লীগপন্থী লোকজনকে ‘বিএনপি পুনর্বাসনে’ ভূমিকা রাখেন নাসির। দলের ভেতরেই আওয়ামী প্রজেক্ট বাস্তবায়নের এমন অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝুনু গ্রুপের।অপরদিকে আয়োজক পক্ষের দাবি ছিল মাসুদ মাষ্টার সভাপতিত্বে করে নাই,করেছে কাওছার মিয়া। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সাবেক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খোসবুর রহমান খোকন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান। বক্তারা বলেন, “নাসিরুল ইসলাম ফরিদপুর-১ জুড়ে আওয়ামী লীগপন্থীদের দলে ঢোকাচ্ছেন। তিনি এখন আর বিএনপির নন, আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছেন।” অন্যদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন নাসির গ্রুপের দুইশতাধিক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ও অপর পাশে চুয়াল্লিশ এর মোড় জুনু গ্রুপের দেড় শতাধিক কর্মী উভয় লাঠিসোটা ইট পাটকেল হাতে জমায়েত হয়। চৌরাস্তার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে থানা পুলিশ ও সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান তাদের আটকে দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম এমকেএম রায়হানুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দুই পক্ষের উপস্থিতি ও উত্তেজনা দেখে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই আমরা ১৪৪ ধারা জারি করে সকলের অবস্থান সরিয়ে দিয়েছি।” তবে এখানেই থেমে থাকেনি ঝুনু গ্রুপ। পরে তারা স্থান পরিবর্তন করে পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাগুরা ব্রিজ সংলগ্ন সড়কে তিন শতাধিক লোক নিয়ে মানববন্ধন করে। সেখানে যোগ দেন বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শেখর ইউপি চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশসহ বিএনপি নেতাকর্মী । উপজেলা বিএনপির (স্হগিত) আহবায়ক আব্দুল মান্নান আব্বাস বলেন,যারা আজকে নাসির ভাইকে বহিষ্কার আওয়ামী লীগের পূর্ণবাসনের কথা বলে, তারাই তো চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা আজকে সমাবেশ, মিছিল মিটিং করেছে। তার প্রমান জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য শুক্রবার বেজিডাঙ্গা স্কুল মাঠে সমাবেশ করা হয় । নৌকার নির্বাচনের সময় আমাদের স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের নির্যাতন করার দায়ে আজকে চেয়ারম্যানকে প্রশাসনের কাছে গ্রেফতারের দাবি জানায়। দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে মানববন্ধন ও হরতাল অবরোধ করা হবে এমন ঘোষণা দেন। জুনু মিয়া গ্রুপের খোকন এটাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য আজ নাসির ভাই এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ডেকেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খন্দকার নাসিরকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। শিগগিরই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না এলে এই উত্তেজনা আরও বিস্তৃত রূপ নিতে পারে।