সারাদেশে

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে সাতক্ষীরার উপকূলীয় মানুষ

মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরা :: সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২ এর আওতাধীন জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ছয়টি পয়েন্টে তিন কিলোমিটার ও বিভাগ-২-এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বড় ধরনের কোন ঘুর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতির বাইরেও উপকূলীয় সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরী করে এই অঞ্চলের নদ নদীর বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা যাই হোক না কেন, নদীতে জোয়ারের সময় সামান্য ঝড়েও বাধগুলো ভেঙে লোকালয় ও ফসলী জমি প্লাবিত হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৬ মে মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে মোখা। এতে বাংলাদেশে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০২২ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে প্রাথমিকভাবে অন্ধপ্রদেশ প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশে কম ক্ষতি হয়। ২০২১ সালের ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে ২০ মে। এতে উল্লেখযোগ্য ধ্বংস এবং প্রাণহানি ঘটে। ২০১৯ সালের ২ ও ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাণ হারান ৯ জন। ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে কলকাতা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূল এলাকায় আঘাত করে ২০১৭ সালের ৩০ মে। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতি ছিল ১১০ কিমি.। মোরার প্রভাবে উপকূলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলে আঘাত হেনেছিল ২০১৬ সালের ২১ মে। এতে চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ৪-৫ ফুট উঁচু ঝড়ের ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষাধিক পরিবার। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূলে আঘাত হানে ২০১৩ সালের ১৬ মে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব ঘূর্ণিঝড়ের কয়েকটি বাদে অধিকাংশতেই সাতক্ষীরা ও খুলনা উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে মে মাস এলেই এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। উপকুলীয় বাসিন্দা প্রসাদ মন্ডল জানান, প্রতিবছর মে মাস আসলে আমাদের মনে খুব ভয় ধরে। বিভিন্ন দুর্যোগে নদের বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাইক্লোন সেন্টার গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। জোয়ারের পানিতে ঘরের ভেতর থাকা মালামাল জিনিসপত্র সব ভেসে যায় উপকূলীয় কপোতাক্ষ নদীর চরের বাসিন্দা নুরজাহান খাতুন বলেন, প্রতিবছর এই মে মাসে বিভিন্ন ঝড় ঝঞ্ঝা আসে। আমরা নদীর চরে থাকি আমাদের ঘর ভেঙে যায়। আবার কষ্ট করে ঠিক করি। মহেশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মে মাসে খুব ভয় হয় বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনো সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধটা ঠিক করলে রাতে একটু ঘুম পড়তে পারতাম। উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২-এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছুটা দূরে বেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজীবাড়ি, সরদারবাড়ি ও মোড়লবাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সঙ্গে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রæত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, যে কোনো আপত্কালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। অমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশাপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টেগুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এছাড়া আমরা জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুত করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

0 Shares

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *