অপরাধ সারাদেশে

অবসর বিনোদনে মুখরিত বোদা উপজেলা চত্বর

বদরুদ্দোজা প্রধান পঞ্চগড় প্রতিনিধি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা চত্বর এখন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের অবসর বিনোদনের এক প্রাণবন্ত মিলনস্থল। উপজেলা প্রশাসনের দূরদর্শী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগে, একসময়ের অবহেলিত এবং আবর্জনাময় একটি পুকুরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক নয়নাভিরাম মিনি পার্ক, যা প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকছে। এটি শুধু একটি বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং সামাজিক আদান-প্রদানের এক উন্মুক্ত মঞ্চ হিসেবেও বোদাবাসীর কাছে সমাদৃত হয়েছে। এই দৃষ্টিনন্দন পার্কটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রকৃতির ছোঁয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পুকুরটির চারপাশের পাড়ে রোপণ করা হয়েছে সবুজ ঘাস এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফল গাছের চারা, যা পার্কটিকে এক প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা দান করেছে। দর্শনার্থীদের আরামদায়ক হাঁটার সুবিধার জন্য পার্কের চারপাশে তৈরি করা হয়েছে সুপ্রশস্ত পাকা রাস্তা। এর ফলে সব বয়সের মানুষ, বিশেষ করে বয়স্করা, সকাল-সন্ধ্যা এখানে মুক্ত বাতাসে হেঁটে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া, পার্কের নান্দনিকতা বৃদ্ধি করতে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য, যা পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এবং শিল্পপ্রেমীদেরও মুগ্ধ করছে। এই মিনি পার্ক কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দ্রুতই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। পুকুরপাড় ঘেঁষে নির্মাণাধীন একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম বোদার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কর্মশালা এবং বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন সহজ করবে, যা স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সের মানুষ—শিশুদের কলরব থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা, এমনকি বয়স্কদের শান্ত অবসর যাপন—সবকিছুই এই পার্কের নিত্যদিনের চিত্র। এটি একটি সামাজিক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বোদা উপজেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আগে এই পুকুরটি ময়লা-আবর্জনায় ভরা একটি নোংরা স্থান ছিল। এখন এটি আমাদের সকলের আনন্দ-বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা নিয়মিত এখানে একত্রিত হই, যা আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করতে সাহায্য করে। উপজেলা প্রশাসনের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার নজির এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, পুকুরটি সংস্কারের পর থেকেই এখানে অসংখ্য মানুষ সময় কাটাতে আসছেন। আমরা দর্শনার্থীদের, বিশেষ করে শিশুদের জন্য, আরও উন্নত বিনোদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতে শিশুদের জন্য আরও কিছু রাইড এবং বিনোদনের অন্যান্য উপকরণ যুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, যাতে এটি পরিবারের সকলের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিনোদন কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই ধূমপানমুক্ত মিনি পার্কটি এখন বোদা উপজেলাবাসীর কাছে শুধুমাত্র একটি বিনোদনের স্থান নয়, এটি এক স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। বোদা উপজেলা প্রশাসনের এই দূরদর্শী এবং জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটি অন্যান্য উপজেলার জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই পার্কটি প্রমাণ করে, সামান্য উদ্যোগ এবং সদিচ্ছা থাকলে কিভাবে একটি জনবহুল স্থানের পরিবেশকে রূপান্তরিত করে সকলের জন্য আনন্দ ও শান্তির উৎস তৈরি করা যায়।

0 Shares

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *