মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও জেলায় শুরু হয়েছে তুলা চাষ। দিন যতই যাচ্ছে তুলার আবাদ ও ফলনও বাড়ছে। এতে করে উন্নত জাতের তুলা উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকেরা। দেশের পাশাপাশি তুলার বৈদেশিক চাহিদা থাকায় কদর অনেকাংশে বেড়েছে এ ফসলের। ঠাকুরগাঁও জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, তুলা বর্তমানে একটি গুরুত্বপুর্ন ফসল। এর আঁশ থেকে সুতা, বীজ থেকে খৈল ও খাওয়ার তেল উৎপাদন হয়। গাছ থেকে জ¦ালানী, কাগজ তৈরি ও হার্ডবোর্ড বানানো যায়। এছাড়াও তুলা চাষে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক গুনে বৃদ্ধি হয়। কৃষকেরা তাদের পতিত জমিতে সহজেই তুলা চাষ করতে পারছেন। পাশাপাশি অন্যান্য সাথী ফসলেরও আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড অফিসের তথ্য মতে জেলায় ২১-২২ অর্থ বছরে তুলা চাষ হয়েছে ৪২৬ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৮১৬ বেল তুলা। যার মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকার মত। ২২-২৩ অর্থ বছরে তুলা চাষের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭শ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাজার মূল্য হবে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকা। কিছুদিন পূর্বে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন তুলা চাষীর প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (তুলার গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের) প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. সীমা কুন্ডু। এ সময় তিনি তুলা চাষের উন্নয়নে কৃষকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং পরামর্শ প্রদান করেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের তুলা চাষী নুরুজ্জমান গোলাপ বলেন, ১৪ বিঘা (৪৬২ শতক) জমিতে তুলার চাষ করেছি। পাশাপাশি সাথি ফসল আখেরও আবাদ করেছি। তুলা চাষ করতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা থেকে ফলন পাচ্ছি ১৬ মনের মত। বর্তমান তুলার মনপ্রতি বাজার মূল্য রয়েছে ৩ হাজার ৮শ টাকার মত। এতে আমার প্রতি বিঘার তুলা বিক্রি হবে ৬০ হাজার টাকা। ৬ মাসে এক বিঘা জমি থেকে তুলা বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ হবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তুলা সংগ্রহ পুরোপুরি শেষ হয়নি; আর কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে তুলার চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পরিদর্শক স্বদেশ চন্দ্র রায় বলেন, জেলায় সিবি, হাইব্রিড-১, সিবি-১৪ ও সিবি-১৫ জাতের তুলা চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। বর্তমানে তুলার মাড়াই মৌসুম চলছে। প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ের দিকে তুলার মৌসুম শুরু হয়। দেশের অন্যান্য স্থানের মত এ জেলাতেও সুপ্রিম, ইস্পাহানী সহ বেশ কয়েকটি কোম্পানী কৃষকদের বীজ সরবরাহ, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করার ফলে তুলার ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা একেএম হারুন অর রশিদ বলেন, বর্তমানে তুলা চাষের ব্যপ্তি বাড়ছে। বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ২০ মন ফলন পাচ্ছেন কৃষকেরা। অন্যান্য ফসলের মত তুলা বিক্রির টেনশনে পরতে হয় না তাদের। কারণ তুলা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের কাছে সরাসরি তুলা ক্রয় করে থাকে। এ ফসলের দামও প্রায় স্থিতিশীল থাকে। তুলার সাথে জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে বেশি করে লাভবান হওয়ায় আগামীতে তুলার আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করছি।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
December 28, 2024