চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ,১৯অক্টোবর চাচাতো বোনের সাথে পরকীয়ার জেরে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে স্বপন আলী (২৭) নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি দর্শনা থানা এলাকার নেহালপুর ইউনিয়নের শ্রীকোল বোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। তবে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল মোড় এলাকায়। গতকাল বুধবার যে বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, ওই বাড়িতে স্বপনের চাচাতো বোনের বিয়ে হয়েছে। পরে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত চাচাতো বোন সুমিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল ওই বাড়িতে দেখা যায়, পুলিশ লাশের সুরতহাল করছে। উৎসুক লোকজন ভিড় করেছেন। ওই বাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোতে কোনো লোকজন নেই। লাশের পাশে রান্নাঘরের চুলায় খিচুড়ি চড়ানো। চুলার পাশে ডিম ও লাল শাক রয়েছে। সড়কের পাশে বসে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত স্বপনের বাবা আব্দুর রশিদ। আব্দুর রশিদ আহাজারি করে জানান, তার ভাতিজির সঙ্গে তার ছেলে স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভাতিজি তার ছেলেকে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন এবং বাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়েছেন। তিনি থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে জানান। হত্যার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী কামালের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমি মারধরের খবর শুনে সকাল আনুমানিক আটটার গিয়ে দেখি অনেক লোকজন। উঠানে শুয়ে পড়ে ওই ছেলে বারবার বাড়ির বউয়ের নাম ধরে (স্বপনের চাচাতো বোন) ডেকে বলছে, “আমার পানি দে রে, আমার হাসপাতালে নিয়ে যা, আমি বাঁচে যাবনে।” ঘণ্টাখানেক পরে গিয়ে দেখি মারা গেছে, বাড়ির বউটি রান্না করছে।’ স্থানীয় কালু শেখ বলেন, তিনি রাতে ওই বাড়িতে বাঁশ দিয়ে মারধরের শব্দ ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুনেছেন। সকালে এসে তিনি একজনের লাশ দেখতে পান।এ বিষয়ে স্বপনের চাচাতো বোনের একটি ভিডিও বক্তব্য পাওয়া গেছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, রাত দুইটার দিকে স্বপন তার শ্বশুরবাড়িতে এসে জানালা ধরে টানাটানি করছিলেন। সে সময় তার ভাশুরসহ স্থানীয় লোকজন স্বপনকে মারধর করে উঠানে ফেলে রেখে যান। তিনি সকালে স্বপনের বাড়িতে খবর দিয়ে রান্না করছিলেন। চাচাতো বোনের ভাষ্য, স্বপন তাকে পছন্দ করতেন। এ নিয়ে অতীতে অনেকবার সালিস হয়েছে। কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুহিন শেখ বলেন, ওই ছেলে তিন-চার মাস আগেও একবার ওই বাড়িতে এসেছিলেন। আমি সালিস করেছিলাম। গত রাতে আবারও এলে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছিলেন। সে সময় আমি ওই যুবককে মারধর করতে নিষেধ করে ৯৯৯ নম্বরে (জাতীয় জরুরি সেবা) কল করতে বলেছিলেন। কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে জালাল মোড় এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত যুবকের মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা, শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত রয়েছে। ওসি বলেন, চাচাতো বোনের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। উঠানে লাশ ফেলে রেখে ওই বাড়ির সবাই পালিয়েছেন। তবে প্রধান অভিযুক্ত সুমিকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।